উত্তরায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পে ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার দুর্ঘটনায় দুই শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর পর নিরাপদ অবকাঠামো নির্মানের ক্ষেত্রে ১৪ টি সুপারিশ দিয়েছে দূর্ঘটনা তদন্তে সড়ক মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।
সচিবালয়ে রোববার তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে এ তথ্য জানান সড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
তিনি বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পে দুর্ঘটনা এড়াতে ভবিষ্যতের জন্য করণীয় বা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে আছে চুক্তি অনুযায়ী, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া। ভারী কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে।
‘সড়ক সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সময় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান তৈরি করে প্রকৌশলী বা পরামর্শক, সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে সমন্বয় করা প্রয়োজন। গার্ডার স্থানান্তরসহ যে কোন ভারী কাজ রাতের বেলায় রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সম্পাদন করতে হবে।’
সড়ক সচিব বলেন, ‘প্রয়োজনে, ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক লেনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ডাইভারশন এবং প্রয়োজনীয়তা থাকলে তা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সড়কের উপর যে কোন অবৈধ পার্কিং বিশেষ করে এ ধরনের নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
‘এ ধরনের নির্মাণ কাজের স্থান পুরোপুরি যথাযথ নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সাথে সাথে বেষ্টনীকে সঠিকভাবে দৃশ্যমান করার জন্য সাইন, সিগন্যাল, মার্কিং, লাইটিং, রিপ্লেকটর ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে চলমান এমআরটি প্রকল্পের নিরাপত্তা বেষ্টনীকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রকল্পের পুরো এলাকায় যথেষ্ট স্ট্যান্ডবাই ক্যাপাসিটি সম্পন্ন ক্রেন, ওয়াকার, অ্যাম্বুলেন্স, ফাস্ট এইড, জরুরি চিকিৎসক রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।’
চুক্তি অনুযায়ী দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা যেতে পারে বলেও সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
সড়ক সচিব বলেন, ‘ক্রেনের রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। ক্রেন চালানোর অপারেটরের লাইসেন্স থাকতে হবে। প্রতিবছর ক্রেনের ফিটনেস নবায়ন করাতে হবে। কনস্ট্রাকশন কাজে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি যেমন- ক্রেন, এক্সাভেটর, টেইলর ইত্যাদি নিবন্ধন আছে কিনা এবং ওই সমস্ত যন্ত্রপাতি/যানবাহন চালকের উপযুক্ত লাইসেন্স আছে কিনা সে ব্যাপারে বিআরটিএ তদারকি করতে পারে।
‘দুর্ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করতে হবে। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে চুক্তির শর্তসমূহ যথাযথ প্রতিপালনের পাশাপাশি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, ঢাকা বিআরটি কোম্পানী লি., সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এর মনিটরিং জোরদার করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি তদারকিতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এর মনিটরিং টিমসমূহের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ইক্যুপমেন্ট সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের স্ব স্ব ইক্যুপমেন্টের রেজিষ্ট্রেশন, ফিটনেস এবং চুক্তিজনিত বাধ্যবাধকতার প্রতিপালনের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বারবার লঙ্ঘিত হওয়া এবং বাংলাদেশী নাগরিকের প্রাণহানি ঘটায় সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে বিষয়টি অবহিত করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্স ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আসিফ রায়হানকে তদন্তে যুক্ত করায় প্রতিবেদন সমৃদ্ধ হয়েছে বলে মনে করেন সড়ক সচিব।