দেশের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সঠিক আইন প্রণয়ন ও তার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতারা। তারা বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই।
রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। কনফারেন্সে ১১ দফা সুপারিশ গৃহীত হয়েছে।
‘সবুজ বাংলাদেশ: সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে তিন দিনব্যাপী এই কনফারেন্সের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশে আসার পরই সবুজ বাংলাদেশ গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে কৃষক লীগ গঠনের মাধ্যমে তিনি সারাদেশে বৃক্ষরোপণের কাজ শুরু করেন। এখন পর্যন্ত পয়লা আষাঢ়ে তিনি এই কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি।
‘প্রতি বছর মানুষ বাড়ছে আর কৃষি জমি কমছে। শিল্প-কারখানা ও স্থাপনা নির্মাণ এবং রাস্তাঘাট-অবকাঠামো উন্নয়নের ফলেও কৃষি জমি কমছে। এজন্য মানুষকে সচেতন করা দরকার। আইন থাকলেও কৃষি জমি রক্ষায় এর প্রয়োগ নেই। এজন্য নতুন একটি আইনের কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে কৃষি জমি রক্ষা করা যায়।’
টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই বলেও মত প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যে দল এই সাবজেক্টের ওপর নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এটা করছে না।’
তিন দিনব্যাপী সেমিনারে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও সেমিনারে অংশ নেয়া সদস্যদের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বন ও পরিবেশ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক।
কনফারেন্সের উদ্বোধনী অধিবেশন শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বিভিন্ন বিভাগ এবং সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ অ্যান্ড সায়েন্সেস (কারস)-এ একযোগে পরিবেশ বিষয়ক ভিন্ন ভিন্ন সায়েন্টিফিক বিষয়ে আলোচনা, সেশন, পোস্টার প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়।
কনফারেন্সে থিম স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রথিতযশা পরিবেশবিদ অধ্যাপক আতিক রহমান। প্ল্যানারি স্পিকার ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ব্যাঞ্জামিন হাওডেন এবং জাপানের পরিবেশবিদ অধ্যাপক হিরোওকু মাতসুদা।
এছাড়াও ২০টি দেশের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানীদের মতামতের ভিত্তিতে বেশকিছু সুপারিশ গৃহীত হয়:
১. পরিবেশগত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে এবং বাংলাদেশের সব বড় ও দূষণপ্রবণ শহরে এটি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা নিতে হবে।
২. বাংলাদেশকে বায়ু ও পানি দূষণমুক্ত রাখতে শিল্প এলাকায় যথাযথ বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা প্রয়োজন।
৩. মোটর গাড়ি, বিমান, ট্রেন ও শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গমন, বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ইটভাটা, অনাবৃত জ্বালানি, কঠিন বর্জ্য ডাম্পিং সঠিক আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।
৪. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং দেশের পরিবেশগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলো রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া।
৫. সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও খরা তীব্রতর হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি এ ধরনের দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে টেকসই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬. পরিবেশ সংক্রান্ত যথাযথ উন্নয়ন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে।
৭. নবায়নযোগ্য, টেকসই, জৈব উপাদান, জৈব রাসায়নিক এবং জৈব জ্বালানি উন্নয়নের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইডের অতিরিক্ত নির্গমন নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।