বরগুনার পাথরঘাটায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে উভয় দলের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ৭০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও দুটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পাঁচ পুলিশ সদস্যও আহত হন বলে জানিয়েছেন পাথরঘাটা থানার ওসি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি চৌধুরি ফারুক জানান, তেল, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়ার প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপি।
বরগুনা-২ আসনের বিএনপির সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম মনি ওই সমাবেশে যোগ দিতে রোববার সড়কপথে ঢাকা থেকে পাথরঘাটার উদ্দেশে রওনা করেন। বিকেল ৪টার দিকে পাথরঘাটা-মঠবাড়িয়া সড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় পৌঁছালে সেখানে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মনির গাড়িবহরে হামলা চালায়।
এতে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হওয়া ছাড়াও ৭০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও দুটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি চৌধুরি ফারুক।
তিনি বলেন, ‘রায়হানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম ও কাকচিড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন পল্টুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সহস্রাধিক নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলাটি চালায়। এতে নুরুল ইসলাম মনিও আহত হয়েছেন। আমি নিজেও হামলার শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন।’
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাবির হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে আন্দোলনের নামে বিএনপির নৈরাজ্য, হামলা, ভাঙচুর ও প্রধামন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগ সোমবার সমাবেশের ডাক দিয়েছে। ওই সমাবেশের প্রচারণায় উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি দল কাকচিড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন পল্টু ও রায়হানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলামের নেতৃত্বে সিঅ্যান্ডবি এলাকায় যায়। এ সময় নুরুল ইসলাম মনি পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে সন্ত্রাসী স্টাইলে ওই সড়ক দিয়ে আসছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের দেখেই তারা হামলা চালায়।’
নিজ দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন দাবি করে জাবির হোসেন বলেন, ‘একপর্যায়ে এলাকাবাসীর প্রতিরোধে বিএনপি সেখান থেকে সটকে পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নুরুল ইসলাম মনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য এলাকা থেকে ১৭ বছর ধরে নির্বাসিত। এলাকার লোকজন তার ওপর ক্ষিপ্ত।’
কাকচিড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন পল্টু বলেন, ‘নুরুল ইসলাম মনি সন্ত্রাসের উদ্দেশ্যে ১৭ বছর পর আবার নির্বাসন থেকে এলাকায় এসেছে। তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমার ওপর অ্যাটাক করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। আমি স্থানীয়দের সহায়তায় কোনোমতে কুয়ায় ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচেছি।’
এ বিষয়ে জানতে নুরুল ইসলাম মনির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নুরুল ইসলাম মনি হামলায় আহত হয়েছেন। তিনি বরগুনায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল হোসেন সরকার বলেন, ‘বিএনপির সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম মনির এলাকায় আগমনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেত গিয়ে আমাদের পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসাধীন।’
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেন পাথরঘাটার ওসি।