অমীমাংসিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির জটিলতা কাটাতে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে উপস্থিতি ও সহযোগিতা দরকার পশ্চিমরাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্ন সফরে দিল্লিতে আমন্ত্রণই পাননি তিনি। ফলে এবারও তিস্তা চুক্তি অধরাই থাকতে পারে।
যদিও বাংলাদেশ চাইছে, শেষ সময়ে হলেও মমতা যেন দিল্লিতে যান এবং তিস্তা চুক্তিতে সম্মতি দেন।
গত মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক হয়েছে দিল্লিতে। সেই সফর শেষে গিয়ে বিমানবন্দরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানান, তিস্তা সম্পর্কে ইতিবাচক কথা হয়েছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভারত সফরে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হতে পারে বলে ধারণা করেছিল অনেকেই।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতির আশঙ্কায় তিস্তা চুক্তি নিয়ে উড়তে থাকা ফানুষ যেন মুহূর্তেই চুপসে গেছে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কাউকে আমন্ত্রণ দেয়া, না দেয়া ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। তবে বাংলাদেশের মানুষে হৃদয়ের আকুতি তিস্তা চুক্তি নিয়ে। যেটা করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি ও উপস্থিতি দরকার। তাই বাংলাদেশ চায় মমতা দিল্লি আসুক। তিস্তা চুক্তি হোক।’
বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জটিল সমীকরণে আটকে গেছে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ চায় তিস্তা চুক্তি হোক। এজন্য বাংলাদেশকে দীর্ঘ কূটনৈতিক যুদ্ধ করতে হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভারতের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিল আবর্তে আটকে আছে। নিশ্চয়ই সমাধানের পথ খুলবে।’
অন্যদিকে অল ইন্ডিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলেন, ‘কেবল একটা চুক্তি হওয়া না নিয়ে হতাশ হওয়া যাবে না। তিন বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে আসছেন। এটা রাষ্ট্রীয় সফর। রাষ্ট্রীয় সফরে চমকের মতো কিছু না থাকলেও ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ভিত তৈরি হয়। এবারও তাই হবে। তা ছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রী যখন একান্ত বৈঠক করবেন, তখন চমক কিছু আসতেও পারে।’
তিস্তা চুক্তির জন্য বাংলাদেশ ভারতকে জেআরসির পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আহ্বান জানিয়েছিল। তবে তিস্তা নিয়ে কোনো সমাধান ভারত তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে করতে পারেনি।
এবারের দ্বিপক্ষীয় জেআরসি বৈঠকের আগে আগস্ট মাসের শুরুতে আলোচনায় বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও দেশটির পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে তাদের আলোচনার সব বিষয় গণমাধ্যমে না এলেও ধারণা করা হচ্ছিল, প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিটি সই করে ফেলবে দুই দেশ।
২৫ আগস্ট দুই দেশের মধ্যে ৩৮তম পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ের জেআরসি বৈঠক নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সইয়ের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তিটি সই করতে সর্বাত্মক চেষ্টা ভারতীয় পক্ষ থেকে করা হবে বলে জানানো হয়।
বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি ভারতীয় আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে না জানিয়ে অভিন্ন নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করবে না বলেও জানিয়েছে বৈঠকে।
২০১০ সালেও দুই দেশের মধ্যে জেআরসির বৈঠক হয়েছিল।
এবারের জেআরসির বৈঠকে অভিন্ন নদী গঙ্গা, তিস্তা, মুন, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার এবং কুশিয়ারা নদীর যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
এ ছাড়া বন্যাসংক্রান্ত তথ্য বিনিময়, নদীর তীর রক্ষণাবেক্ষণ, অভিন্ন অববাহিকা ব্যবস্থাপনা ভারতীয় আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন পানিবণ্টন চুক্তির জন্য খসড়া তৈরিতে আরও ৮টি অভিন্ন নদীর তথ্য বিনিময়ে জেআরসি বৈঠকে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে দুই দেশের মধ্যে কুশিয়ারা ও ফেনী নদী নিয়ে আলাদা আলাদা চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে করা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির আলোকে আবারও সম্ভাব্যতা যাচাই করতে জেআরসি বৈঠকে উভয়পক্ষই সম্মত হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে আগামীকাল সোমবার চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ভারত সফর করেন তিনি।