প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে কথা বলতে চান না বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মিয়ানমার সীমান্তে দেশটির সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ডে যথেষ্ট প্রতিবাদ হয়নি বলেও মনে করেন তিনি।
শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগের দিন রোববার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবেশী দেশের এই সফর নিয়ে দুই দেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলো নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত বেশ কিছু ইস্যুর সমাধান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হলেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়াটা গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে। এর পাশাপাশি সীমান্ত হত্যার ইস্যুও রয়েছে।
এই সফরে তিস্তা চুক্তি হওয়ার কোনো আভাস কোনো পক্ষ দিচ্ছে না। জানানো হয়েছে, এই সফরে জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে চুক্তি হতে পারে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের বছর দেড়েক বাকি থাকতে এই সফরকে কীভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি কথা বলব না।’
বাংলাদেশের ভূমিতে মিয়ানমারের মর্টার শেল নিক্ষেপ ও দেশটির দুটি সামরিক হেলিকপ্টারের বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি মনে করেন, এই ঘটনায় সরকারের ভূমিকা যথেষ্ট নয়।
তিনি বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকার হলে প্রতিবাদ করতে তাদের সেই শক্তি থাকে না। এই সরকারের কোনো শক্তি নেই। এরা টিকে আছে অন্যের শক্তি দিয়ে, তাই নিজের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভূমিকা নিতে পারে না, বিদেশির ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়।
‘এদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি। হয়তো এবার বলবে, আমরা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কঠোর ভাষায় বিষয়টি তাদের সরকারকে অবহিত করেছি।’
নির্বাচনের দরকার কী
নির্বাচন না দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরাসরি ক্ষমতায় চলে আসার কথাও বলেন ফখরুল।
বিএনপির আন্দোলনে প্রাণহানির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্পষ্ট কথা, নির্বাচন নির্বাচন খেলার প্রয়োজন কী… নির্বাচন বাদ দিয়ে সরাসরি উত্তর কোরিয়ার মতো ঘোষণা দিয়ে দেন। এক দল, এক ব্যক্তি ক্ষমতায় থাকবে। তাহলে তো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কারও প্রাণ দেয়ার প্রয়োজন নাই।’
ফখরুল বলেন, ‘দাবি আদায়ে বিএনপির কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা দেখে আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে পড়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই বিরোধী দলমুক্ত নির্বাচনি মাঠ গড়তে সারা দেশে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।’
নারায়ণগঞ্জে একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিএনপির মিছিলে চায়নিজ রাইফেলের গুলি করা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘এরা কথায় কথায় গুলি করে, আইন বলতে তারা কিছু মানে না। প্রধানমন্ত্রী আবার বলছেন, আক্রান্ত হলে পুলিশ কি বসে থাকবে। আমি বলতে চাই, তদন্ত করে দেখুন। কে কার দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে, আর কার ওপর গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।’
নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী শাওন প্রধানের মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘প্রতিটি হত্যা মামলার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। আমরা প্রতিটি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি, জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি জানান, সারা দেশে দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত নিহত তিন, আহত দুই শতাধিক, গ্রেপ্তার দুই হাজারের অধিক, আসামি করা হয়েছে চার হাজার নেতাকর্মীকে, অজ্ঞাত আসামি ২০ হাজার, বাড়িঘরে হামলা হয়েছে ২৫ স্থানে।
ফখরুল কথা বলেন তাদের নির্বাচকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি নিয়েও। বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সমাধান একটাই। সেটা হচ্ছে, এই সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে। তাদের সরে গিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’