বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খাদ্য উৎপাদন বাড়ালে অর্থনীতি সচল থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১২:১০

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই এ (রাশিয়া-ইউক্রেন) ধরনের যুদ্ধ বাধুক আর যাই বাধুক, বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য আমাদের যে উর্বর মাটি আমরা সেটা ব্যবহার করে নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করব। কারও মুখাপেক্ষী হব না। ভিক্ষা চেয়ে চলব না। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। এইভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাদের চলতে হবে। সেটাই আমি আপরাদের আহ্বান জানাব।’

মাটির উর্বরতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে পারলে রাশিয়া-ইউক্রেনের মতো যুদ্ধ কিংবা যেকোনো পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যায় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আর তাই এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রেখে দেশের সব মানুষকে উৎপাদনমুখী হওয়ার আহ্বান আবারও জানালেন তিনি। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি সামাল দিতে আবারও পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে বললেন প্রধানমন্ত্রী।

পিরোজপুরের বেকুটিয়া পয়েন্টে কচা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ঢাকার তেজগাঁওয়ে সোমবার সকালে নিজ কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই এ (রাশিয়া-ইউক্রেন) ধরনের যুদ্ধ বাধুক আর যাই বাধুক, বাংলাদেশের অর্থনীতি সচল রাখার জন্য আমাদের যে উর্বর মাটি আমরা সেটা ব্যবহার করে নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করব। কারও মুখাপেক্ষী হব না। ভিক্ষা চেয়ে চলব না। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব। এভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাদের চলতে হবে। সেটাই আমি আপনাদের আহ্বান জানাব।’

তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে, যেটা আমি আহ্বান করেছি, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। আপনারা জানেন, একদিকে যেমন করোনা, এই মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা অনেক নাজুক হয়ে পড়েছে। অনেক উন্নত দেশ তাদের মূল্যস্ফীতি এত বেশি এবং সেখানে তাদের পণ্য পাওয়া কষ্টকর।’

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর উদাহরণ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিদ্যুৎ সেখানে তারা রেশনিং করে দিচ্ছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে। পানি ব্যবহার তারা সীমিত করে দিয়েছে। এমনকি গোসলের পানিও যেন বেশি ব্যবহার না হয়, সেই নির্দেশনা দিচ্ছে ইউরোপ ও ইংল্যান্ড। এই অবস্থায় আমাদেরও আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। তাই পানি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।’

করোনার ধাক্কা সামাল দেয়ার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও হোঁচট খেয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বেধেছে, আমেরিকা রাশিয়ার ওপর স্যাংশন দিয়েছে। ফলে খাদ্য ক্রয়, সার প্রাপ্তি সবকিছুই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সব থেকে বড় কথা পরিবহন, আমরা বিদেশ থেকে যে জাহাজে করে পণ্য আনব, সেই জাহাজের ভাড়া অতিরিক্ত বেড়ে গেছে। কাজেই প্রতিটি জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই সেই অবস্থায় আমাদের আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা করতে হবে।’

মেট্রোরেল, বিআরটি, বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো মেগাপ্রকল্পগুলো যখন চালু হবে তখন দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এই দক্ষিণ অঞ্চলে আমরা ইতিমধ্যে অনেক সেতু তৈরি করেছি। পায়রা নদীর ওপর সেতু তৈরি করা হয়েছে এবং অন্যান্য নদীতেও আমরা সেতু তৈরি করে দিচ্ছি। আমাদের দেশে বিশেষ করে, দক্ষিণ অঞ্চল যে এতদিন অবহিত ছিল আর অবহেলায় থাকতে হবে না।’

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর গুরুত্ব তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই সেতুটি হবার পর পিরোজপুরবাসীর জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ আরও উন্মুক্ত হবে। আমরা এদিকে পদ্মা সেতু করে দিয়েছি, পায়রার ওপর অনেক সেতু করা হয়েছে, কীর্তনখোলা নদীতে সেতু করা হয়েছে। এই সেতুটি হওয়ার পর পিরোজপুরের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাবে।’

যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় পিরোজপুরের পেয়ারাও নিয়েও উৎসাহী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সব থেকে বড় কথা পিরোজপুরের পেয়ারা আমরা খুব তাড়াতাড়ি তাজা তাজা ঢাকায় বসে খেতে পারব। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। পিরোজপুরে প্রচুর পেয়ারা হয়। সেগুলোকে ওখানে আপনারা প্রসেস করতে পারেন, ইন্ডাস্ট্রি করতে পারেন, প্রিজার্ভ করার ব্যবস্থা করতে পারেন, শিল্পায়ন গড়তে পারেন ওই অঞ্চলে- সেই সুযোগটাও সৃষ্টি হবে।

‘পদ্মা সেতু হওয়ায় যেমন তাজা ইলিশ চলে আসছে, তেমনি আপনাদের এদিক থেকে শাক-সবজি ফলমূল বিশেষ করে পেয়ারা খুব দ্রুত চলে আসবে। আমাদের ওই অঞ্চলের মানুষ তারা চিরদিনই অবহেলিত। হয়তো একটা ফসল হয়, কোনো রকম কষ্ট করে দিন যাপন করতে হয়। আমরা কিন্তু বসে থাকিনি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে দিয়েছি, সেখানে একটা ক্যান্টনমেন্টও নির্মাণ করে দিয়েছি, সেখানে নৌঘাঁটি করা হচ্ছে।’

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আপনাদের উৎপাদনমুখী হতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে।’

তিনি বলেন, ‘মাছ আমাদের বড় একটা সম্পদ। মাছ উৎপাদনের অনেক সুযোগ এবং সেগুলো বাজারজাত করার বড় সুযোগ আপনারা পেয়ে যাচ্ছেন।’

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনশিল্পকে আরও বিকশিত করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যে বিশাল নদী এবং তার পাশেই সাগর, সেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে। যেগুলো আমরা অনেক উন্নত করতে পারব। কাজেই সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুযোগ আসবে। বাংলাদেশে এত নদী আমাদের। সেখানে আমরা যোগাযোগব্যবস্থা যত উন্নত করব, তত মানুষের কল্যাণ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কাজেই আমি এটুকু বলতে চাই যে অঞ্চলটা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ছিল, এখন আর ওই অঞ্চলের কেউ অবহেলিত থাকবে না।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু

পিরোজপুর ও বরিশালকে সংযোগকারী এই সেতুটির মূল দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ মিটার। সেতুর দুই প্রান্তে ৪৯৫ মিটার ভায়াডাক্ট বাদ দিলে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় এক কিলোমিটার।

সেতুটি ১০টি পিলার এবং ৯টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ১৩ দশমিক ৪০ মিটার প্রস্থের এই সেতুর পিরোজপুর ও বরিশাল প্রান্তে এক হাজার ৪৬৭ মিটার সংযোগ সড়কসহ পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে আরও দুটি ছোট সেতু ও বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে চীন সরকার। বাকি ২৪৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে।

এ বিভাগের আরো খবর