বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রধানমন্ত্রীকে চায়ের দাওয়াত দিলেন শ্যামলী গোয়ালা

  •    
  • ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:৪৯

শ্যামলী গোয়ালা বলেন, ‘আমাদের চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আপনাকে দাওয়াত দিলাম, আপনি আমাদের বাসায় এসে চা খেয়ে যাবেন।’

দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন করছিলেন চা শ্রমিকরা। টানা ১৮ দিন কর্মবিরতির পর প্রধানমন্ত্রী তাদের মজুরি ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করেছেন। এরপর কাজে ফেরেন শ্রমিকরা।

তবে আন্দোলনের শুরু থেকেই চা শ্রমিকরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য। সে সুযোগ হয়েছে শনিবার বিকেলে।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।

দেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই প্রথম এভাবে কথা বলার সুযোগ পেলেন শ্রমিকরা। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবজার ও চট্টগ্রাম থেকে চা শ্রমিকরা ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।

কথা বলে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন চা শ্রমিকরা। তারা নিজেদের দাবি জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নিজেদের অনুরাগ ও আস্থার কথাও জানান। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে নিজেদের বাড়িতে চায়ের আমন্ত্রণও দেন দরিদ্র চা শ্রমিকরা।সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগান থেকে এই মতবিনিময় সভায় চা শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শ্যামলী গোয়ালা।

প্রধানমন্ত্রীকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আপনাকে দাওয়াত দিলাম, আপনি আমাদের বাসায় এসে চা খেয়ে যাবেন।’

শ্যামলী বলেন, ‘চা বাগানে এতগুলো মানুষ, আমরা না খেয়ে আন্দোলন করেছি। কিন্তু আমাদের পাশে কেউ আসেনি। একমাত্র আপনি আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা। আমাদের পিতা। আমরা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া এখন আর কাউকে চিনি না।’

তিনি বলেন, ‘আপনি বিবেচনা করে দেখবেন, বাগানের চা শ্রমিকরা কীভাবে বাঁচতে পারে। কীভাবে ছেলেমেয়ে মানুষ করতে পারে। কীভাবে আরেকটু ভালোভাবে খেতে পারে।’

নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে শ্যামলী বলেন, ‘আমাদের চা বাগানে একটা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেবেন। বাগানে একজন এমবিবিএস ডাক্তার প্রয়োজন। কারণ আমাদের বাগানে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নেই। আমাদের বাগানের গর্ভবতী মায়েরা চার মাস ছুটি পায়। কিন্তু তারা যে কঠিন পরিশ্রম করে, তাতে তাদের ছয় মাস ছুটি পেলে খুব ভালো হতো। এইটুকু আপনি ব্যবস্থা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘‌আমাদের পাশে আপনি সব সময় থাকবেন আশা করি। থাকতেই হবে আাপনাকে। কারণ আমরা মরলেও নৌকা, বাঁচলেও নৌকা। আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, আমাদের দেখে রাখবেন। কারণ আপনি আমাদের বাবা-মা।’

ভূমির অধিকারের দাবি জানিয়ে শ্যামলী বলেন, ‘আপনার বাবা বঙ্গবন্ধু আমাদের ভোটের অধিকার দিয়েছেন, আপনি আমাদের ভূমির অধিকারটুকু দেবেন। কারণ ভূমির অধিকার দিলে আমাদের খুব ভালো হয়।’

লাক্কাতুরা থেকে বক্তব্য রাখেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। তিনি বলেন, ‘অনেক খুশি হইছি আজকে। আমাদের সাথে প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন। আপনি আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।’

রাজু বলেন, ‘আমাদের ভূমির অধিকারটুকু দেবেন। যাতে আমাদের সন্তানদের কখনও উচ্ছেদ করা না হয়। আমরা বংশপরম্পরায় এখানে থাকলেও আমাদের ভূমির অধিকার নেই।’

বাগানের স্কুলগুলো সরকারীকরণের দাবিও জানান তিনি। বলেন, ‘মালিকরা আমাদের যে সুবিধা দেয়ার কথা বলে থাকে আদতে সেগুলো দেয় না। এগুলো একটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আপনি তদারকি করবেন। যাতে আমরা প্রাপ্য সুবিধাটুকু পাই।’

চার জেলা থেকে মোট আটজন শ্রমিক প্রতিনিধি এই সভায় বক্তব্য রাখেন। সবাই নিজেদের ভূমির অধিকার দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।

চা শ্রমিকদের বক্তব্য শুনে তাদের দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের চা শ্রমিকরা, যাদের ব্রিটিশরা একসময় নিয়ে এসেছিল, তাদের অমানবিক অত্যাচার করত, খাটাত। জাতির পিতা শেখ মুজিব টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যবস্থা নেন এবং পরবর্তীতে তাদের নাগরিকত্ব দেন, ভোটের অধিকার দেন।

‘ভোটের অধিকার পেয়েছে, নাগরিকত্ব পেয়েছে, কিন্তু তারা ভূমিহীন থাকবে, এটা তো হতে পারে না। সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা ইনশাআল্লাহ আমি করেছি। আমার আর যত নাগরিক তাদের সাথে একই সঙ্গে … কারণ হিজড়া, বেদে অন্য যারা ভাসমান প্রত্যেককে আমি আলাদা করে ঘর করে দিচ্ছি, তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এখানে আমার চা শ্রমিকরা অবহেলিত থাকবে, এটা কখনও হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা অবশ্যই… অন্তত মাটিতে তাদের অধিকারটা যেন থাকে সেটা ইনশাআল্লাহ আমি করে দিয়ে যাব। অবশ্যই করব।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি জানি চা বাগানের মালিকরা নিবেদিতপ্রাণ, তারা স্কুল করে শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেয়, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু সব জায়গায় সেটা হয় না।

‘কাজেই এখন যে স্কুলগুলো আছে, সেগুলো যাতে সঠিকভাবে চলতে পারে.. আমি এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ করে দেখব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এগুলো সব জাতীয়করণ করা দরকার, যাতে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই স্কুলগুলো চালাতে পারি। আমাদের ছেলেমেয়েরাও যাতে লেখাপড়া শেখে এবং আরও উন্নত প্রযুক্তির চা শিল্প যেন আরও উন্নত হয়।’

এ সময় চা শ্রমিকদের নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করার আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘যারা শ্রম দেয় তাদের দিকে তাকানো আমাদের দরকার। আমি এটুকু বলতে পারি, আমার বাবা তো এই কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্যই রাজনীতি করে গেছেন, দেশ স্বাধীন করে গেছেন। কাজেই তার বাংলাদেশে মানুষ কষ্টে থাকবে, এটা হতে পারে না।’

এ বিভাগের আরো খবর