বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চা শ্রমিকদের ঘর দেয়া আমার কর্তব্য: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:২১

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সাধ্যমতো আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, এ দেশে কেউ ভূমিহীন থাকবে না। যারা ভূমিহীন তাদের জন্য আমরা ঘর করে দিচ্ছি। জাতির পিতা শেখ মুজিবই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি। আমি মনে করি, তার মেয়ে হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব-কর্তব্য। আমরা সেটা করেছি।’

চা শ্রমিকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া জাতির পিতার মেয়ে হিসেবে নিজের কর্তব্য বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই শিগগিরই চা শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

সিলেট ও চট্টগ্রামের চা শ্রমিকদের সঙ্গে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে শনিবার তিনি এ আশ্বাস দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের চা শ্রমিকরা, যাদের ব্রিটিশরা একসময় নিয়ে এসেছিল, তাদের অমানবিক অত্যাচার করত, খাটাত। জাতির পিতা শেখ মুজিব টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার পরে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেন এবং পরবর্তীতে তাদের নাগরিকত্ব দেন, ভোটের অধিকার দেন।

‘ভোটের অধিকার পেয়েছে, নাগরিকত্ব পেয়েছে, কিন্তু তারা ভূমিহীন থাকবে, এটা তো হতে পারে না। সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা ইনশাআল্লাহ আমি করেছি। আমার আর যত নাগরিক তাদের সাথে একই সঙ্গে … কারণ হিজড়া, বেদে অন্য যারা ভাসমান প্রত্যেককে আমি আলাদা করে ঘর করে দিচ্ছি, তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এখানে আমার চা শ্রমিকরা অবহেলিত থাকবে, এটা কখনও হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা অবশ্যই… অন্তত মাটিতে তাদের অধিকারটা যেন থাকে সেটা ইনশাআল্লাহ আমি করে দিয়ে যাব। অবশ্যই করব।

‘এখানে কোনো শ্রেণি অবহেলায় পড়ে থাকবে, এটা হয় না। একটা ঠিকানা, একটা বাসস্থান মানুষের জীবনটা পরিবর্তন করে দেয়। আমরা সে ব্যবস্থাটা অবশ্যই করে দেব। সবাই এ দেশে সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে, সেটাই আমি চাই।’

পাশাপাশি চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য পরিচালিত স্কুলগুলো সরকারীকরণ করা যায় কি না সে ব্যবস্থা করার কথাও জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি চা বাগানের মালিকরা নিবেদিতপ্রাণ, তারা স্কুল করে শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেয়, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু সব জায়গায় সেটা হয় না।

‘কাজেই এখন যে স্কুলগুলো আছে, সেগুলো যাতে সঠিকভাবে চলতে পারে.. আমি এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ করে দেখব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এগুলো সব জাতীয়করণ করা দরকার, যাতে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এই স্কুলগুলো চালাতে পারি। আমাদের ছেলেমেয়েরাও যাতে লেখাপড়া শেখে এবং আরও উন্নত প্রযুক্তির চা শিল্প যেন আরও উন্নত হয়।’

সিলেটের চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিএমও

এ সময় চা শ্রমিকদের নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করার আশ্বাসও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘যারা শ্রম দেয় তাদের দিকে তাকানো আমাদের দরকার। আমি এটুকু বলতে পারি, আমার বাবা তো এই কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্যই রাজনীতি করে গেছেন, দেশ স্বাধীন করে গেছেন। কাজেই তার বাংলাদেশে মানুষ কষ্টে থাকবে, এটা হতে পারে না।

‘আমার সাধ্যমতো আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি, এ দেশে কেউ ভূমিহীন থাকবে না। যারা ভূমিহীন তাদের জন্য আমরা ঘর করে দিচ্ছি। জাতির পিতা শেখ মুজিবই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি। আমি মনে করি, তার মেয়ে হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব-কর্তব্য। আমরা সেটা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিকিৎসার ব্যবস্থা…. অ্যাম্বুলেন্স চাওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স তো দেবই। এই মাতৃত্বকালীন যেন কেউ কষ্ট না পায় সে ব্যবস্থা করব। দ্রুত যাতে চিকিৎসা পান সে ব্যবস্থা করব। কমিউনিটি ক্লিনিক আমরা করেছি, সেখানে কিন্তু মাতৃত্বকালীন চিকিৎসাটা আমরা বিনা পয়সায় দিই, ওষুধ দিই। কাজেই যেখানে যেখানে বাগান আছে, তার আশেপাশে এই ক্লিনিকগুলো আছে কি না সেটা দেখব।

‘অনেক জায়গায় আছে আমি জানি, আবার অনেক জায়গায় দূরত্বের কারণে নাও থাকতে পারে। দ্রুত যাতে চিকিৎসা পেতে পারেন এবং অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নেয়ার ব্যবস্থাটা যাতে হয় আমরা সে ব্যবস্থা করব। মাতৃত্বকালীন ছুটি আমরা ছয় মাস করে দিয়েছি। এটা নির্ভর করে অনেক সময় শিল্পমালিকরা সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এখানে যে কষ্টসাধ্য কাজ, পাহাড়ি রাস্তায় ওঠা-নামা করা, এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই আমি মনে করি, মাতৃত্বকালীন ছুটিটা ছয় মাস হওয়া উচিত। সেটার ব্যবস্থাও আমি করে দিতে চাই। গ্র্যাচুইটি কেন দেয়া হচ্ছে না এটা আমরা দেখব।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমরা অনেক কাজ করে যাচ্ছি। অন্যান্য ভাবেও যাতে অর্থ উপার্জন করা যায়। শুধু খাবার না, পুষ্টিকর খাবার যেন আপনারাই শুধু না, আপনাদের শিশুরাও যাতে পেতে পারে সেটা আমরা দেখব।

‘আমি একটা কথাই বলতে পারি, আমার একটাই চিন্তা বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই কাজ করছি। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই চা শ্রমিকরা সব সময় নৌকায় ভোট দেন। আপনারা ভোট দিয়েছেন বলেই সেবার সুযোগ পেয়েছি। বারবার, তিনবার ক্ষমতায়ও এসেছি। এ জন্যই দেশটাকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে পারছি।’

প্রধানমন্ত্রীর কথায় ভরসা রাখায় চা শ্রমিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে আমার ওপর ভরসাটা রেখেছেন। আমার কথা মেনে নিয়েছেন, কাজে যোগ দিয়েছেন। আপনারা ভালো থাকেন, এটাই আমি চাই। আমাদের নেতাদের বলব, আপনাদেরও দায়িত্ব আছে এই শ্রমিকদের দিকে দেখা, তাকানো।

‘তারা কিন্তু কোনো দিকে তাকায় না, সব সময় নৌকা মার্কায় ভোট দেয়। কাজেই যারা নৌকার জয় চায়, তাদের সবার দায়িত্ব এই শ্রমিকদের দিকে দেখা। আর এটা আমাদের দলের নীতি, আওয়ামী লীগের নীতি, জাতির পিতার নীতি। সেটা মাথায় রেখেই আপনারা তাদের পাশে থাকবেন। আমি আছি, থাকব।’

দেশের চা বাগানবেষ্টিত চার জেলা থেকে আটজন শ্রমিক এই মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন। বক্তব্যে নিজেদের অভাব ও দাবির কথা জানান তারা। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের কথাও তুলে ধরেন।

দীর্ঘ ১৮ দিন ধর্মঘট পালনের পর গত ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০ টাকা বাড়ান। এতে চা শিল্পের অচলাবস্থা কাটে। ১৭০ টাকা মজুরিতে ২৮ আগস্ট থেকে কাজে ফেরেন শ্রমিকরা। সে সময় চা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহের কথা জানান সরকারপ্রধান।

এ বিভাগের আরো খবর