সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।
রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে বলে শনিবার নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন মামলার রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
১৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
রিটকারীদের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘ফৌজদারি আইনে বলা আছে, এ আইন সবার জন্য সমান। যেকোনো লোকের জন্যই সমান। এই জায়গায় সরকারি কর্মচারীদের একটা সুরক্ষা দেয়া হয়েছিল। এ জন্যই আদালত বলেছেন, এই ধরনের সুরক্ষা কোনো একটা গ্রুপকে দেয়া ঠিক হয়নি। তাই আদালত বিধানটি বাতিল ঘোষণা করেছেন।’
রায়ে আদালত বলেছে, আমাদের দেশে সাধারণত ফৌজদারি মামলায় এমনিতেই তদন্তে দীর্ঘ সময় লাগে। এমনকি বছর বছর ধরে চলে। এর মধ্যে যদি এই বিধান যুক্ত করা হয়, তাহলে সেই তদন্ত আর শেষ হবে না।
সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। আর সরকারি চাকরিজীবীরা কর্মরত অবস্থায় কোনো ফৌজদারি মামলায় জড়ালে তার দেখভালের দায়িত্ব সরকারের। সুতরাং এ অবস্থায় নতুন করে এ বিধান যুক্ত করার দরকার নেই বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
রায়ে আদালত বলেছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪১ (১) ধারা বেআইনি, সংবিধান ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।
আদালত বলেছে, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। তার পরও ৪১ (১) ধারা করে সেখানে সরকারি কর্মচারীদের আলাদাভাবে একটি সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। তা কোনোভাবেই সংবিধানসম্মত নয়। এ আইনটি অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি নেয়ার বিধান বাতিল করে গত ২৫ আগস্ট রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে ২৩ অক্টোবর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ঠিক করে দেয় আপিল বিভাগ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪১ (১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না এবং সংবিধানের ২৬ (১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর রুল জারি করে হাইকোর্ট।
২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এক গেজেটে বলা হয়, ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকরের কথা রয়েছে।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়, কোনো সরকারি কর্মচারী দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে করা ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র নেয়ার আগে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।