নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় বলাইশিমুল গ্রামে মাঠ রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্ম হলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
শুক্রবার আন্দোলনকারীদের এক মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলার মাঠ একটি জাতীয় সম্পদ। বলাইশিমুলের বাসিন্দারা একটি জাতীয় সম্পদ রক্ষার জন্য আন্দোলন করছেন। কিন্তু যারা আন্দোলকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন, তারা অন্যায় করছেন।’
আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো প্রত্যাহারের পাশাপাশি খেলার মাঠ উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানান সাবেক উপদেষ্টা।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রায় সময় খেলার মাঠ, নদী, খাল, বিল ও পাহাড় ধ্বংস না করতে বলেন। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এখানকার (কেন্দুয়ার) প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানছে না। এটা দুঃখজনক। তারা যদি তাদের অবস্থান থেকে ফিরে না আসেন, তবে জনগণ আন্দোলন করে তাদের সরে দাঁড়াতে বাধ্য করবেন।’
শুক্রবার বিকেলে বলাইশিমুল গ্রামের ঈদগাহ মাঠে ৮০১ সদস্যবিশিষ্ট বলাইশিমুল মাঠ রক্ষা গণকমিটি ওই মহাসমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে বলাইশিমুল ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।
বলাইশিমুল গ্রামে অনুষ্ঠিত সমাবেশের একাংশ
গণকমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান মণ্ডলের সভাপতিত্বে এবং আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মানবাধিকার নেত্রী খুশী কবির, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বাপার যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না, উদীচীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নূর, কলি আক্তার, হলি খান, আজিজুর রহমান, ওবায়দুল হক্ক উজ্জ্বল প্রমুখ।
বলাইশিমুল গ্রামের একটি খাসজমিতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ১২টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই খাসজমিটি তারা শত বছরেরও বেশি সময় ধরে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাই এ মাঠের পরিবর্তে আশপাশের অন্য কোনো খাসজমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন তারা।
প্রকল্পের শুরু থেকেই তারা মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সভা-সমাবেশ করছেন। আন্দোলন চলাকালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণাধীন স্থাপনা ভাঙচুর এবং দুটি ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় শতাধিক গ্রামবাসীকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি তারা মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করে নির্মাণকাজও অব্যাহত রাখে।
এ অবস্থায় গত ১৪ আগস্ট বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বলাইশিমুল মাঠে নির্মাণকাজ তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখতে জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়।