ঢাকা ওয়াসার পানিতে ভর্তুকি দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
এ জন্য রাজধানীতে জোনভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণ করা হবে। সেই সঙ্গে বস্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষদের কম দামে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মিলনায়তনে সিটি রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘নগর সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ’ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে বসবাসরত বেশির ভাগ মানুষই বিত্তবান। তাই গরিব মানুষের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করে সেই টাকা দিয়ে ধনীদের ভর্তুকি দেয়া নৈতিকভাবে কতটা সমর্থনযোগ্য সে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘গুলশান-বনানীতে বসবাসকারীরা যে হারে পানির বিল দেন, বস্তিতে থাকা অথবা যাত্রাবাড়ীতে থাকা মানুষ কেন সমান পানির মূল্য পরিশোধ করবেন?’
সিটি রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘নগর সাংবাদিকতায় প্রশিক্ষণ’ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় জোনভিত্তিক পানির দাম আলাদা করে বাড়ানো হবে। গুলশান-বনানীর অভিজাত এলাকায় পানির দাম বেশি থাকবে। নিম্ন আয়ের মানুষের এলাকায় পানির দাম অপেক্ষাকৃত কম থাকবে। তবে ঢাকা শহরে পানিতে ভর্তুকি দেয়া হবে না।’
শুধু পানি নয়, হোল্ডিং ট্যাক্স, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য ইউটিলিটিক্যাল সার্ভিসের মূল্য জোনভিত্তিক নির্ধারিত হওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশের মানুষ ভালো আছে। এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। করোনা মহাসংকটের পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে।’
জ্বালানির দাম বাড়ায় খাদ্যপণ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ কারণে মানুষ অসুবিধায় আছে। সরকার এটা অস্বীকার করছে না। বরং মানুষকে ভালো রাখার জন্য যা যা করা দরকার সরকার তার সবই করছে।’
ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশ বর্তমানে খারাপ অবস্থায় আছে উল্লেখ করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। বলেন, ‘এটা না বলে সরকারের ব্যর্থতার কারণে শুধু যদি বাংলাদেশের মানুষ খারাপ আছে এটা বলা কতটা যৌক্তিক? এটা বলে কী মানুষের ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে না।’
অনেক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) গেজেট প্রকাশ হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এখন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ঢাকাকে বাসযোগ্য, আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
আগস্টে এ বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলেও মন্ত্রীর দাবি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সফল। তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে এই সফলতা অর্জিত হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় যাওয়ার মূল শক্তি হলো জনগণ। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক দলের আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারও তাদের আছে। কিন্তু আন্দোলনের নামে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও করবেন, আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাবেন, রাষ্ট্র তো এটা করতে দেবে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। তারা সে দায়িত্ব পালন করবেই।’
সিটি রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আদিলুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠুসহ আরও অনেকে।