বেগম রওশন এরশাদের নাম ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষ কোনো একটা এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের। শুক্রবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উত্তরার বাসভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দলের কাউন্সিল ডাকার তিন দিন পর এমন মন্তব্য এলো দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছ থেকে।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবারই অবশ্য রওশনকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে ওই পদে বসাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন বরাবর চিঠি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে আকস্মিকভাবে দলের সম্মেলন ডাকেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। সম্মেলন ডাকার বিষয়টি অবগত নন বলে সেদিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন জি এম কাদের। রওশনের এই সম্মেলন ডাকার এখতিয়ার নেই বলেও এ সময় বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে দলের সংসদ সদস্যদের বৈঠকে রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর জন্য স্পিকার ড. শিরীন শারমিন বরাবর চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
দলে এ বিবাদের প্রেক্ষাপটে শুক্রবার এক প্রশ্নের উত্তরে জি এম কাদের বলেন, ‘তিনি (রওশন এরশাদ) আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র, তিনি আমাদের শ্রদ্ধার আসনেই আছেন। তবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পার্টির বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রওশন এরশাদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি সংসদে অংশ নিতে পারছেন না। বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। আবার কখনও কখনও বেগম রওশন এরশাদকে দিয়ে কিছু মহল এমন কিছু বক্তব্য, বিবৃতি ও বিজ্ঞপ্তি দেয়ানোর ব্যবস্থা করছে, যা সার্বিকভাবে দলের অবস্থানের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির সংসদীয় কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, অসুস্থতা ও বয়সের কারণে তিনি বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকা সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য রাজনীতি করছি। কারও লেজুড়বৃত্তি করতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি নয়। আমরা স্বকীয়তা নিয়ে রাজনীতির মাঠে আছি।’
এ সময় জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই। আমরা চাই, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীল পরিবেশে রাজনৈতিক চর্চা। এখন প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তিকে শত্রু মনে করা হয়, এটি ঠিক নয়। আমরা সবাই যার যার রাজনীতি করব, কিন্তু সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে। আবার দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে আমরা সকল রাজনৈতিক দল যেন এক হয়ে কাজ করতে পারি।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘১৯৯০ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার ক্ষমতায় গিয়ে দেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দলীয়করণের অপসংস্কৃতি শুরু করেছে। দেশের মানুষ এখন আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সহিংস রাজনীতি পছন্দ করে না। দেশের মানুষ বিকল্প একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি দেখতে চায়। আমরা মানুষের সেই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছি।’