ডিজেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানোর পর বাস ভাড়া কিলোমিটারে ৫ পয়সা কমানোর কোনো প্রভাবই পড়েনি মাঠ পর্যায়ে। যাত্রীরা আগে যে ভাড়ায় যাতায়াত করতেন, এখনও তাই হচ্ছে।
স্বল্প দূরত্বে নতুন ভাড়ার কোনো প্রভাব নেই কাগজে-কলমেই। টাকার সর্বনিম্ন একক এক টাকা ভাড়া কমবে যদি একজন যাত্রী ২০ কিলোমিটার যান। তবে রাজধানীতে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে বাস নেই বললেই চলে। ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মতো রুটগুলোতেই কেবল এটি সম্ভব।
তবে বাসে এক টাকার হিসাব হারিয়ে গেছে সেই কবে। ফলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা যেমন ভাড়া কমাননি, তেমনি যাত্রীরাও বিষয়টি নিয়ে গা করেননি।
২০১৬ সালেও এমন একটি চিত্র দেখা গিয়েছিল। সে সময় ডিজেলের দর লিটারে তিন টাকা কমানোর পর বাস ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি তিন পয়সা হারে কমানোর ঘোষণা এলেও এর প্রভাব পড়েনি। কারণ, কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার গেলে তিন টাকা কমত, যেটি আসলে হওয়ার নয়।
এবারও যখন তেলের দাম ৫ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়, তখনই বোঝা গিয়েছিল বাসমালিকদের লাভ সামান্য বাড়া ছাড়া যাত্রীদের কোনো ফায়দা নেই।
শুধু তাই নয়, বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পর সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী দাবি করেন, ওয়েবিল পদ্ধতিতে ভাড়া কাটা হয় না। সেটি শুনে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, সরকারি উচ্চপদে থেকে মানুষের ভোগান্তি সম্পর্কে আসলে যে তিনি কোনো খবর রাখেন না, সে জন্যই এটি বলেছেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর প্রায় সব কটি রুটেই ওয়েবিল পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে অন্য একটি দূরত্ব পর্যন্ত আলাদা হিসাব করে ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। সেখানে কিলোমিটারের কোনো হিসাবই নেই। এমনও দেখা গেছে চার কিলোমিটারের মধ্যে দুটি ওয়েবিল বসানো হয়েছে। ফলে যেখানে ভাড়া হওয়া উচিত ১০ টাকা, সেখানে আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা।
সোহেল রানা নামের এক যাত্রী বলেন, ‘রামপুরা থেকে গুলিস্তান আগে যেতাম ২৫ টাকায়। ভাড়া কমার পরেও এখনও যাচ্ছি একই টাকায়। তাহলে বাসের ভাড়া কোথায় কমল?’
তিনি বলেন, ‘এতে আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের খুব একটা লাভ হচ্ছে না। লাভবান হচ্ছেন বাসের মালিকেরা। তারা ৫ টাকা কমে তেল কিনতে পারছেন, একই সঙ্গে বেশি ভাড়াও নিচ্ছেন।
‘সরকার পরিবহনমালিকদের লাভবান করতে এই সুবিধা দিল, যাত্রীদের সেই পকেট কাটা অব্যাহত থাকল।’
আরেক যাত্রী আজাদ হোসেন বলেন, ‘বাসের ভাড়া ৫ পয়সা কমেছে ভালো কথা। কিন্তু ভাড়ার তালিকা কোথায়। কোনো বাসেই আমি ভাড়ার তালিকা পাইনি। যদি ভাড়ার তালিকা পেতাম, তাও দেখে বুঝতাম আমার গন্তব্যের ভাড়া কত। যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে।’
নতুন হারে ভাড়া নেয়া হচ্ছে কি না, সেটি তদারকি করতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিআরটিএর নয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে। অতীতে এই পদ্ধতিতে ভাড়ায় শৃঙ্খলা আনতে না পারার পরও সংস্থাটি ভিন্ন কিছু ভাবতেও পারছে না।
সংস্থাটি জানিয়েছে ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় এবং রুট পারমিট না থাকা, এক রুটের পারমিট নিয়ে অন্য রুটে চালানো, হাইড্রলিক হর্ন ব্যবহার, ফিটনেস না থাকাসহ নানা অপরাধে ৮৪টি বাসকে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একটি বাস জব্দ করা হয়েছে।
বিআরটিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার যেহেতু নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে, তাই অনেক বাসেই হয়তো ভাড়ার তালিকা পৌঁছায়নি। আমরা আসা করছি দুই- এক দিনের মধ্যে এসব অভিযোগ আর থাকবে না। আর বেশি ভাড়া আদায় করলেই জরিমানা করা হবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’