বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মিয়ানমারে ভারী অস্ত্রের ঝনঝনানি, সীমান্তবাসীর ঘুম হারাম

  •    
  • ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:০৫

ঘুমধুম সীমান্তে নজরদারি করে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। তবে গোলাগুলির কারণ জানতে নানাভাবে চেষ্টা করেও এই ব্যাটালিয়নের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নুরজাহান বেগম। বয়স ৪০-এর বেশি। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রুর উত্তর পাড়ায় তার বাড়ির আঙিনায়ই গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমার থেকে উড়ে এসে একটি মর্টার শেল পড়ে। ক্ষতি হয় ওই বাড়িটিরও।

সেনাবাহিনীর লোকজন ভারী গোলাটি নিষ্ক্রিয় করলেও ভয় কাটছে না নুরজাহানের পরিবারের। ভয়ে খেয়ে না খেয়ে পাহাড়ের ঢালুতে গিয়ে থাকছেন তার পরিবারের আরও তিন সদস্য। দুই মেয়ের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ। সময় কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়।

সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে সীমান্তে উত্তেজনা চলছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে মর্টার শেলসহ নানা ভারী অস্ত্রের আওয়াজে এপারের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু ও বাইশপারী এলাকার মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার সকালেও তুমব্রুর পশ্চিম, উত্তর ও মধ্যমপাড়ায় স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় পরপর ১৫টি ভারী অস্ত্র নিক্ষেপের আওয়াজ শোনা যায়। তখন সেখানকার লোকজনের মধ্যেও চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল।

নুরজাহানের মতো তুমব্রুর পশ্চিম, উত্তর ও মধ্যমপাড়ার অন্তত ৭০০ পরিবার এখন দুঃশ্চিন্তায় আছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে প্রতিটি ঘরেই।

পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সিএনজি অটোরিকশাচালক ছাদেক হোসেন বলেন, ‘রাতে ভারী গোলাবর্ষণের আওয়াজ কিছুটা কমে। কিন্তু সকাল থেকেই ভয়াবহতা শুরু হয়। একদিক থেকে একটা ফায়ার হলে অন্যদিক থেকেও তার জবাব দেয়। প্রতি ১০ মিনিট পরপর এমন শব্দ ভেসে আসে আমাদের গ্রামে।’

সীমান্ত পিলার ৩৩ থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বসবাস করেন কৃষক নুরন্নবী। তিনি জানান, দিনে অনেকটা চাষাবাদের কাজে থাকলেও রাতে পাশ্ববর্তী পাহাড়ের ঢালুতে চলে যান। বাড়ি থেকে দূরে হলেও সন্তানদের কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত তার।

উত্তরপাড়ার আরেক বাসিন্দা হামিদুল হক। গত ২৮ আগস্ট তার বাড়ির সামনের কাঁচা সড়কে এসে মর্টার শেল পড়ে। ফেটে যায় বসতবাড়ির দেয়াল। ভয়ে সেই থেকে বাড়িছাড়া হামিদুল।

চায়ের দোকানদার এলমা খাতুনের কণ্ঠেও ফুটে উঠেছে মিয়ানমার থেকে ভেসে আসা গোলার শব্দের ভয়াবহতা। তিনি বলেন, ‘সরকার এখনও আমাদের অন্য জায়গায় নেয়ার ব্যবস্থা করছে না। মনে হচ্ছে এখানেই মারা পড়ব। এ ছাড়া তো কিছু করার নেই।’

ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শহিদ উদ্দিন জানায়, গত ২৮ তারিখ থেকেই তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ। বাড়ি থেকে বের হলেই বকা দিচ্ছেন মা। গুলির শব্দ বেড়ে গেলে বিজিবি এসে দোকানপাট-ঘরের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ নেই।

কলেজশিক্ষার্থী সাদিয়াতুল জান্নাত বলেন, ‘পরিবারের লোকজন বাজার-হাটে যাচ্ছে। সব সময় তাই চিন্তায় থাকতে হয়, কেউ আঘাত পেল কি না।’

ভয় আর উদ্বেগে দিন কাটছে সীমান্তগ্রামের বাসিন্দা নুরজাহানের পরিবারের

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের গুলির শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমার সীমান্তের দেড়-দুই কিলোমিটার দূরের পাহাড়ে গিয়ে পড়ছে এক একটা শেল ও গুলি। থেমে থেমে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে গোলাগুলি। শূন্যরেখার দিকে কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। সেখানকার আশ্রয় শিবিরে ৬২১টি পরিবারে ৪ হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গা আছে। গোলাগুলির শব্দে তারাও এখন আতঙ্কে।’

ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ জানান, বিভিন্ন সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন মিয়ানমার সীমান্তে (রাখাইন রাজ্যের তুমব্রু এলাকায়) সশস্ত্র বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে কয়েক দিন ধরে। সংঘর্ষে গুলি ছাড়াও মর্টারশেলের মতো ভারী অস্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে।’

শূন্যরেখার কোনারপাড়া আশ্রয় শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘গুলির শব্দে ঘুমাতে পারছি না। মনে হচ্ছে ক্যাম্পেই গুলি ছোড়া হচ্ছে। সকাল ৬-৭টার দিকে শুরু হয় গোলাগুলি, চলে গভীর রাত পর্যন্ত।’

এসব কথা বলার সময়ই দুইবার গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। দিল মোহাম্মদ বলেন, শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে দিতে ২০১৮ সালের ২ মার্চ তুমব্রু সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছিল মিয়ানমার। তখন প্রতিদিন গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যেত। মাইকিং করে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বলা হতো। নইলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দিত। বিজিবির তৎপরতায় তখন সেনা সমাবেশ সরিয়ে নিলেও একাধিক চৌকি স্থাপন করে রোহিঙ্গাদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।’

এসব বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, ‘গোলার শব্দে স্থানীয় বাসিন্দারা ভয় পেলেও বিজিবির তৎপরতায় এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সতর্ক করা হলেও কাউকে এলাকাটি থেকে সরিয়ে আনা হয়নি।’

ঘুমধুম সীমান্তে নজরদারি করে কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। তবে গোলাগুলির কারণ জানতে নানাভাবে চেষ্টা করেও এই ব্যাটালিয়নের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে গত ২৮ আগস্ট মর্টার শেল উড়ে আসার পর বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেছিলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে ওদের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে ঝামেলা চলছে। আমরাও বিষয়টি জেনেছি। যা কিছু ঘটছে, সব ওপারেই। আমরাও সতর্ক আছি।’

এ বিভাগের আরো খবর