রক্তের প্রতিশোধ নিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে সরকারকে পরাভূত করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মিছিল-পূর্ব সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি।
একই দিন সকালে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শাওন প্রধান নামে একজন নিহত হয়েছেন। শাওন যুবদল কর্মী বলে জানিয়েছে বিএনপি।
এ ঘটনাটি বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দঘন আয়োজনে ক্ষোভ তৈরি করে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল ও সমাবেশে নেতারা অঙ্গীকার করেন সরকার পতনের।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আমাদের ভাই শাওনের প্রাণ গেছে। নেত্রকোণা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির অংসখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তারা এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
‘শাওনের হত্যার প্রতিশোধ যদি নিতে চাই, নুর এবং রহিমের হত্যার প্রতিশোধ যদি নিতে চাই, তাহলে আজকে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথ দখল করে এই ভয়াবহ আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে আমরা যে আন্দোলন করছিলাম, তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভোলায় আমাদের ছাত্রদল নেতা নুরে আলম, স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা আব্দুর রহিম শহীদ হয়েছেন।’
এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার আজকে জনগণের অধিকারকে হরণ করছে। তারা মনে করছে, গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকারের জন্য এ দেশের মানুষের যে ন্যায্য দাবি- সেই দাবিতে যখন তারা আন্দোলন করছে, তখন তারা (সরকার) মনে করছে, গুলি, গুম, হত্যা, খুন ও নির্যাতন করে সেই আন্দোলনকে দমিয়ে দেবে।
‘আমাদের দল থেকে খুব পরিষ্কার করে বলেছি, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই সরকারকে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে আমরা বাধ্য করব।
‘আমরা বাধ্য করব এই সংসদকে বিলুপ্ত করে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে নতুন সংসদ গঠন করে নতুন সরকার নির্বাচিত করতে।’
বেলা ২টা থেকেই মিছিলে যোগ দিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাগম হতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। তাদের খণ্ড খণ্ড মিছিল কয়েক ঘণ্টা ধরে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়। এরপর বেলা ৩টার পর আরও ঘণ্টাখানেক নয়াপল্টন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
মিছিলে নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান। তারা খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং জিয়াউর রহমানের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা নিয়ে আসেন।
এই কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। মির্জা ফখরুল ছাড়াও এতে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম।
বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচি
মিছিলের আগে দেয়া বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল কর্মী শাওন প্রধানের নিহতের প্রতিবাদে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গায়েবানা জানাজা ও শনিবার সারা দেশে প্রতিবাদ সভা হবে বলে জানান তিনি।