জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তার ভাবির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেছেন, কোনো ষড়যন্ত্র দলের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করতে পারবে না।
দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে না জানিয়ে দলের কাউন্সিল আহ্বান করে রওশন বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর দিন বৃহস্পতিবার বনানীতে নিজের দলীয় কার্যালয়ে কথা প্রসঙ্গটি নিয়ে বক্তব্য রাখেন তিনি।
রওশন আগামী ২৬ নভেম্বর কাউন্সিল আহ্বান করে যাদেরকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটিতে রেখেছেন তাদের মধ্যে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তারা সবাই এক জন চুন্নুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, সুনীল শুভ রায়, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরীফা কাদেরও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আগের দিন রওশনের চিঠির প্রতি ইঙ্গিত করে জি এম কাদের কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত। গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে যাবে জাতীয় পার্টি। কোনো ষড়যন্ত্রই জাতীয় পার্টির ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সৈনিকেরা ষড়যন্ত্রে কখনও বিভ্রান্ত হবে না। কোনো ষড়যন্ত্রে মাথা নত করবে না জাতীয় পার্টি। সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে আমরা পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
২০২১ সালের ১৪ জুলাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিতে রওশন ও জি এম কাদেরকে নিয়ে দুটি বলয় তৈরি হয়। এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে সম্মেলন আহ্বান করে এরশাদপত্নী উল্লেখ করেন, তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে তার দলকে একক শক্তিতে লড়াই করতে দেখতে চান। জানান, তিনি দল ছেড়ে যাওয়া পরীক্ষিত ও নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদেরকে দলে ফিরিয়ে আনতে চান।
রওশনের চিঠিতে বলা হয়, ‘আমি দীর্ঘদিন যাবৎ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং ব্যাংকক এর বুমরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। এ সময় আমি লক্ষ্য করি, জাতীয় পার্টির গঠনতান্ত্রিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নিয়মাবলী এবং পার্টির মূল আদর্শ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। বর্তমানে পার্টি গঠনতান্ত্রিক গৃহীত আদর্শ, নিয়ম ও নীতিমালা থেকে সরে গিয়ে ভ্রান্তপথে অগ্রসর হচ্ছে।’
এরশাদের জীবদ্দশায় নানা সময় ভাঙনের শিকার জাতীয় পার্টি যে আবার ভাঙছে, সেটি আগের দিনই স্পষ্ট হয়ে উঠে। সেদিনই আবার জি এম কাদেরের বলয় থেকে আলাদা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলের কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার রওশনের নেই। এটি চেয়ারম্যানের এখতিয়ার।
রওশন যে সম্মেলন ডেকেছেন তার সামগ্রিক কর্মকাণ্ড ও তৃণমূল পর্যায়ে দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ের জন্য দলের ছয় কো চেয়ারম্যানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। এদের মধ্যে আছেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও যাকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছেন জি এম কাদের নিজেই।
অন্য পাঁচ জনই দলের সংসদ সদস্য। তারা হলেন: ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলা ও সালমা ইসলাম।
জাতীয় পার্টি থেকে পাল্টা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাউন্সিল করতে রওশন যাদেরকে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন, তারা কেউ এ বিষয়ে অবগত নন।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর আগে থেকেই জাতীয় পার্টিতে দুটি বলয় স্পষ্ট হয়ে উঠে। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে একাংশের নেতৃত্ব দিতে থাকেন রওশন এরশাদ। তবে এরশাদ তার ভাই জি এম কাদেরকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে যান। এরপর জি এম কাদের তার ভাবিকে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক করেন। পাশাপাশি তিনি জাতীয় সংসদে হন বিরোধীদলীয় উপনেতা।
তবে সম্প্রতি রওশন অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে যাওয়ার পর দলের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হন। জি এম কাদের এবং তার অনুসারীরা তার খোঁজ না নেয়ায় গত ২ জুলাই দলের একটি মতবিনিময় সভায় ক্ষোভ ঝাড়েন।
সেদিন তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ আট মাস আমি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। কিন্তু পার্টির কেউ খোঁজ নেয়নি। বরং আমি সবার খোঁজ নিয়েছি। অথচ যাদের দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, তারাই আমার নিয়মিত খোঁজ রেখেছেন। মসজিদ ও মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া-প্রার্থনা করেছেন তারা।’