‘সোনার চামচ মুখে’ দিয়ে জন্ম। কিন্তু আজ কঠিন বাস্তবতায় বিএনপি।
সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান তখন দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সেনাবাহিনীতে থেকেও রাজনীতি করছিলেন; না সেনাবাহিনী, না রাজনীতি, কোথাও তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ নেই। সে সময় প্রথমে জাগদল, এরপর জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট এবং শেষে ঘোষণা হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
বলতে গেলে ক্ষমতার পেটে জন্ম দলটি। অথচ এখন ১৬ বছর হয়ে গেল ক্ষমতার বাইরে। জন্মের পর এতটা সময় টানা কখনও ক্ষমতার বাইরে থাকেনি দলটি।
বছর ঘুরে বিএনপি প্রতিষ্ঠার ৪৪তম বার্ষিকী যখন এলো, তখন জিয়ার গড়া সেই দলটি রাজনীতিতে নিজেদের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠায়, ক্ষমতায় ফেরার আপ্রাণ লড়াইয়ে ব্যস্ত।
বিএনপির মুখ্য দাবি এখন নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়, যেটি না হলে তারা ২০১৪ সালের মতোই ভোট বর্জন করে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা নিয়ে রাজপথে কর্মসূচি বাড়াচ্ছে। একই সময়ে আবার দলটির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা অভিযোগ করছেন, তাদের দলের একাংশ সরকারের সঙ্গে আঁতাতে ব্যস্ত। তারা ভোটে চলে যেতে চায়।
দলে সন্দেহ, অবিশ্বাস, আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা, শরিকদের মধ্যে ভাঙনের মধ্যে বৃহস্পতিবার দলটি তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করছে।
পাঁচ বছর আগে বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য সফরে গেলে দেখা হয় তারেক রহমানের সঙ্গে। ফাইল ছবি
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে, রাজনীতিতে প্রভাবও আপাতদৃষ্টিতে কমেছে। ওদিকে আবার জনসমর্থন ব্যাপক- এমন একটি অবস্থায় বিএনপি আসলে কেমন আছে সে সিদ্ধান্তে আসা খুবই কঠিন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দলের নেতৃত্বে বিভক্তি নিয়েও কানাঘুষা চলে। চেয়ারপারসন পদে বেগম খালেদা জিয়া। তবে তার কারাদণ্ড হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা তারেক রহমানের পদ পাল্টায়নি খালেদা জিয়া কারাগারের বাইরে আসার পরও।
সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালের ৩ জুলাইয়ের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জিয়াউর রহমান।
অবশ্য ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি নিয়ে পরে আরও চার দফায় আরও দুই বছরের জন্য মুক্ত হওয়া খালেদা জিয়া রাজনীতি নিয়ে একটি কথাও বলছেন না। তার কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না, এই বিষয়টি খোলাসা করছে না দলটি। ওদিকে দেশের বাইরে থেকে ভার্চুয়ালি দলের সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন তারেক রহমান। তাতে খালেদা জিয়ার সায় আছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য দলের ভেতর থেকে প্রকাশ্যে কোনা প্রশ্ন ওঠেনি। তবে ফিসফাস করে অনেক কথাবার্তাই হয়।
বিএনপি আসলে কেমন আছে, জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান হেসে দিয়ে বলেন, ‘মন্দের ভালো বোঝেন? সে রকম আছি। পথটা এখন দুর্বার। মনের জোর নিয়ে এই পথ পাড়ি দিতে হবে।
‘এই মন্দটাকে বিদায় করতে ঐক্যের বিকল্প নেই, আন্দোলনের বিকল্প নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেই আন্দোলনের প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। ভালো থাকার দিন সামনেই।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘সময়-অসময়, ভালো-মন্দ এই নিয়েই জীবন। এখন সময়টা অনুকূলে নেই, এটাই সত্যি। এই সরকার আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর যে অত্যাচার করছে, গুম করছে, সেই অবস্থায় মনের জোরে, দলের প্রতি ভালোবাসায় রাজপথে আছে।’
এক এগারোর ধাক্কা এখনও
বিএনপি শেষ দিন যখন ক্ষমতায়, সেই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দেশ ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ।
সেদিন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের হাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ক্ষমতা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু ইয়াজউদ্দিনকে মেনে নিতে তৈরি ছিল না আওয়ামী লীগ ও সমমনারা।
এর মধ্যে ২২ জানুয়ারি নির্বাচন ধরে এক তরফা ভোটের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে দেশ। তখনও সরকারে না থাকলেও ইয়াজউদ্দিনের ওপর বিএনপির প্রভাব ছিল স্পষ্ট।
কোনো সমাধান নেই বলে যখন মনে করা হচ্ছিল, সে সময় ১১ জানুয়ারি হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছাড়েন ইয়াজউদ্দিন, এই পদে শপথ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমেদ। রাষ্ট্রপতি তার আগে জারি করেন জরুরি অবস্থা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচনের আয়োজন করার কথা ৯০ দিনে। তবে এই সরকার ক্ষমতায় থাকে প্রায় দুই বছর। এই সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন গ্রেপ্তার হন, তেমনি বন্দি হন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বিএনপির জন্য আরও বড় ধাক্কা লাগে খালেদা জিয়ার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর গ্রেপ্তার। তারেকের বিরুদ্ধে তখন নানা অভিযোগ। আর বিএনপি দাবি করে আসছিল, বন্দি অবস্থায় তাদের নেতাকে নির্যাতন করা হয়েছে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের তারিখ পড়ার আগে দুই দলকে ভোটে আনতে ওই সরকারের চেষ্টার অংশ হিসেবে তারেক ও কোকোকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে পাঠানো হয় দেশের বাইরে। মালয়েশিয়া থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মারা যান কোকো। আর তারেকের যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করার কথা বিএনপি নিজেই স্বীকার করেছে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট বলতে গেলে ভেসে যায়। বিএনপি পায় ৩০টি আর জামায়াত দুটি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৩০টি, সঙ্গে জোটের শরিক জাতীয় পার্টি পায় ২৭টি। অন্য শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিও পায় কিছু আসন।
এরপর আরও দুটি নির্বাচন হয়েছে যার মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিরটি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নেমে বর্জন করে ব্যর্থ হয় বিএনপি। সেই সরকারের এক বছর পূর্তির দিন অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও পরে হরতাল ডেকে সরকার পতনের আন্দোলন থেকেও ফেরে খালি হাতে।
অকার্যকর হয়ে পড়া সেই অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহার করে আজও কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি দলটি। এর মধ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়ে লড়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল করে। কেবল আটটি আসন পায় বিএনপি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আবার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি তুলছে বিএনপি। বলছে, নইলে তারা ভোটে যাবে না।
এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন, বিদেশে অর্থপাচার মামলায় সাত বছরের দণ্ড ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা, বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তারেকের।
কারাদণ্ড হয়েছে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ারও। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে তিনি কারাগারে যান। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্ট এই মামলায় তার দণ্ড বাড়িয়ে করে ১০ বছর। একই মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা হয় সাত বছরের।
প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে ১৭ বছরের সাজা স্থগিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া মুক্তি পান। পরে আরও চার দফা মুক্তির মেয়াদ বাড়ে ছয় মাস করে। প্রধানমন্ত্রী সেদিনও বলেছেন, তিনি দয়া দেখিয়েছেন। বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার যে দাবি তোলা হচ্ছে, তা সম্ভব নয় বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
এই দুই নেতার সাজা হওয়ায় তারা ভোটে অযোগ্য। ফলে কেবল নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার নয়, বিএনপির মাথাব্যথা ভোটে তাদের নেতা নিয়েও। গত নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে ভোটে দাঁড় করাতে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ে হেরে যাওয়ায় এবারও তারা সেটি পারবে কি না, সেটি অনিশ্চিত। আর তারেক রহমানকে ভোটে দাঁড়াতে হলে দেশে ফিরে অন্তত আপিল করতে হবে।
মাঠপর্যায়ে হতাশা, কর্মীদের ক্ষোভ
২০১৪ সালে ৫ জানুযারির নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে দলটি ব্যর্থ দলটির ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে যে কৌশল নিয়েছিল, সেটি নিয়ে এখন প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলছেন নেতারা। বিশেষ করে ছোট দল গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে কেন জোটের প্রধান নেতা করা হয়েছিল, সেটি নিয়ে প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
আবার সেই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করে সংসদকে অবৈধ বলেও তাতে যোগ দেয়া নিয়ে এখনও বিএনপির নেতারাই প্রকাশ্যে কথা শোনান।
এসব ঘটনায় মাঠ পর্যায়ে দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ হতাশা থেকে নিষ্ক্রিয় হয়েছিল বছরের পর বছর। সম্প্রতি ধারাবাহিক কর্মসূচিতে তৃণমূলে সক্রিয় হতে গিয়ে আবার ক্ষমতাসীন দলের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
দলটির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তৃণমূলের নেতারা এসে অভিযোগ করেন। তারা বলেন, তারা প্রস্তুত আছেন। তারা বলেন একদফা আন্দোলনে নামতে। তবে এটা তো একটি দলীয় সিদ্ধান্ত। হাইকমান্ডের অনুমতি ছাড়া সম্ভব না।’
তিনি বলেন, ‘গত মাসেও বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি দেখা করতে আসেন। আমি তাদের তেমন কোনো সান্ত্বনা দিতে পারি না।’
তারেক রহমানের দেশের বাইরে থাকার বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ বলে একটা ব্যাপার রয়েছে। সরাসরি যে আলাপ আলোচনা সম্ভব, তা তো আর স্কাইপিতে সম্ভব না। তবে আমরা শিগগিরই সব সমস্যা কাটিয়ে উঠব।’
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে ২২ আগস্ট রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ছবি: নিউজবাংলা
অভ্যন্তরীণ কোন্দল
দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে যে সদস্যরা রয়েছেন, তারা তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেই সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
কিন্তু স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কেউ দলের ভেতরে প্রশ্ন ওঠা বা সমালোচনার ভয়ে নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নিয়ে নেন না বলে তাদের মাঝে অভিযোগ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতির ক্ষেত্রে দলটির অনেকে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কোন্দল এবং দ্বন্দ্বের বিষয়ও তুলে ধরেন।
সম্প্রতি বিএনপির পরিকল্পনা করা জাতীয় সরকার ইস্যুতে দলের মহাসচিবের সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ রায়ের মতের অমিল দেখা যায়।
গয়েশ্বর এমনও বলেছেন, দলের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে আঁতাতের চেষ্টা করছে। তিনি দুই দিন বলেছেন, বিএনপি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত ভোটে চলে যেতে পারে।
তবে নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপে গয়েশ্বর দলে কোন্দলের বিষয়টি স্বীকার করতে চান না। তিনি বলেন, ‘কোন্দলের কিছু নেই। ভালো কিছু পেতে হলে সবাইকে মতামত দিতে হবে। সবার মতামত এক হবে না। সেক্ষেত্রে আলোচনা হয়। এভাবেই সমাধান হবে।’
কোন্দলের বিষয়টি স্পষ্ট করে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কোন্দলের শুরু তো আসলে শীর্ষ পর্যায় থেকে। সেটা তো আপনারা জানেনই। আর এমনি তো কোনো সুপারিশের ক্ষেত্রেও দুই তিন ভাগ হয়ে যায়। সিন্ডিকেট মেইনটেইন করে। এমন অবস্থা আসলে দলের জন্য স্বস্তির না। তবে সব দলেই এমন কম বেশি থাকে।’
জোটের বাঁধন আলগা
২৩ বছরের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের একটি ভিডিও বক্তব্য সামনে আসার পর বিএনপিতে অস্বস্তি স্পষ্ট। শফিকুর তার দলের কুমিল্লা শাখার নেতাদেরকে বলেছেন, তারা আর বিএনপির সঙ্গে জোটে নেই।
এ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্টত বিব্রত। তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন না, এমনও বলছেন, বক্তব্য না দেয়া তার গণতান্ত্রিক অধিকার।
জামায়তকে ছাড়া একক শক্তিতে ভোট করা নিঃসন্দেহে বিএনপির জন্য কঠিন হবে।
জামায়াতের আগে জোট ছেড়েছে ইসলামী ঐক্যজোটসহ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বেশ কয়েকটি দল। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এসব দল জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া বিএনপির বেকায়দা হতে পারে এ কারণে যে, ভোটের আগে এসব দলের নেতা-কর্মীরা তৃণমূলের মানুষদেরকে যে আহ্বান জানাতেন, তা তাদের ভোট বিএনপির বাক্সে নিয়ে আসতে সহায়তা করতে পারত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটর সদস্য নজরুল ইসলাম খান অবশ্য বলছেন, ‘জোট নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমাদের সঙ্গে জোটে থেকে তাদের লাভ। বিএনপি নিজেই স্বতস্ফূর্ত দল। দেশের অন্যতম বড় দল। আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা এগুচ্ছি।’
ইফতার মাহফিলের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের সাবেক দুই আমির মতিউর রহমান নিজামী ও মকবুল আহমাদ। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৬ সালে ফাঁসির দড়িতে ঝুলেছেন মতিউর রহমান নিজামী আর ২০২১ সালে হাসপাতালে মারা গেছেন মকবুল আহমাদ। ছবি: সংগৃহীত
বক্তব্য পাল্টাছে
খালেদার জিয়ার মুক্তি ও সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েও তেমন সাড়া পায়নি দলটি। বাস্তবিকভাবে আন্দোলন ফলপ্রসূ করতে পারেনি। তাই জনগণের দাবিকে কেন্দ্র করেও আন্দোলনের পরিকল্পনা সাজিয়েছেন দলটি।
তাদের মতে, সাধারণ মানুষকে পাশে পেতে হলে, জনগণের ভালোমন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামছে দলটি।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘জ্বালাও পোড়াও করে জনগণের জন্য বাধা বিপত্তি সৃষ্টি না করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের কঠিন আন্দোলনে নামতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে তার সকল ব্যবস্থা নিয়েছি। সরকার কিন্তু এতে ঠিকই নড়েচড়ে বসেছে।’