পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং এতিমখানায় বাংলা অনুবাদের দুটি কোরআন শরিফ দেয়ার শর্তে চট্টগ্রামে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার দুই আসামিকে মুক্তি দিয়েছে আদালত- এমন খবরে সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
চট্টগ্রামে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার দুই আসামিকে গত সোমবার মুক্তি দেন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলাম। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি নিউজবাংলাতেও প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
তবে বিষয়টি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই আসামির মুক্তির ক্ষেত্রে মোট নয়টি শর্ত দিয়েছেন বিচারক।
বিবাদির আইনজীবী সঞ্জয় দে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে আর কখনও জড়িত না হওয়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, দুটি বাংলা অনুবাদের কোরআন এতিমখানায় দেয়া এবং নিজেরা নিয়মিত পাঠ করা, মাদকবিরোধী কাজে সম্পৃক্ত হওয়া, আদালত যেকোনো সময় তলব করলে হাজির হওয়া, প্রবেশন অফিসারের তদারকির প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা, মা-বাবার সেবা করা, নিজ পেশায় মনোযোগী হওয়া এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার শর্ত দিয়েছেন বিচারক।’
আইনজ্ঞরা বলেছেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন আইন অনুযায়ী অভিযুক্তকে শর্তাধীন মুক্তি দেয়া যেতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে ব্যক্তিগত কোনো কাজের শর্ত দেয়া দেয়া যাবে না, তাকে দেয়া শর্তটি অবশ্যই সমাজের কল্যাণমূলক কাজ সংশ্লিষ্ট হতে হবে।
মাদকসহ গ্রেপ্তার দুই আসামির মুক্তির ক্ষেত্রে দেয়া শর্তগুলো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর মধ্যে মাদকবিরোধী কাজে সম্পৃক্ত হওয়া এবং মা-বাবার সেবা করার মতো কাজগুলো সমাজকল্যাণমূলক।
এর আগে চলতি বছরের ১৪ জুন একই আদালত মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত শিল্পী ফাহমিদা রহমানকে বিনা বেতনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের গান শেখানোর শর্তে মুক্তি দিয়েছিল। ছয় মাসের কারাদণ্ডের বদলে তাকে ছয় মাস পর্যন্ত গান শেখানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাঁজাসহ আটক দুই ব্যক্তিকে কেবল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং এতিমখানায় বাংলা অনুবাদের দুটি কোরআন শরিফ দেয়ার শর্তে মুক্তি দেয়া হলে সেটি আইনসিদ্ধ হতো না। কারণ এ দুটি শর্ত ব্যক্তির নিজস্ব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তবে নয়টি শর্তের মধ্যে সমাজকল্যাণমূলক শর্তও রেখেছেন বিচারক।
হাইকোর্ট থেকে প্রবেশনে মুক্ত মতি মাতবর নামের এক ব্যক্তির আইনজীবী ছিলেন শিশির মনির। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নামাজ পড়া ছাড়াও সমাজকল্যাণমূলক শর্ত আদালত দিয়ে থাকলে বিচারক আইনের বাইরে যাননি। এসব শর্ত তিনি দিতে পারেন।
‘পাশাপাশি প্রবেশন কর্মকর্তা বা সমাজসেবা কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে। এই কর্মকর্তা সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করলে মুক্তিপ্রাপ্তদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে আমি আশা করি।’
চট্টগ্রামে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার দুই আসামির বিরুদ্ধে মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, দুজন হলেন ৪২ বছর বয়সী মোহাম্মদ হোসেন ও ৩০ বছর বয়সী আব্দুর রহিম।
গত ২২ মে চট্টগ্রাম বন্দর থানার পোর্ট কলোনি এলাকা থেকে এক কেজি গাঁজাসহ তাদের আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬/১ এর ১৯ (ক) ধারায় বন্দর থানায় মামলা হয়। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইয়াছিন গত ২৯ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ছিল গত সোমবার। দুজনকে আদালতে হাজিরের পর তারা দোষ স্বীকার করেন। তাদের বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা না থাকায় আদালত দুজনকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে নয়টি শর্তে মুক্তি দেয়।
এর আগে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট মায়ের সেবা করার জন্য পাচঁ বছর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মতি মাতবরকে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছিল।
ইয়াবার মামলায় বিচারিক আদালতে পাচঁ বছর কারাদণ্ড পান মতি মাতবর। তবে পরে বৃদ্ধ মায়ের সেবা এবং সন্তানকে লেখাপড়া করানোর শর্তে জেলে না পাঠিয়ে তাকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি জাফর আহমেদের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
রায়ে বিচারক বলেন, ছোট দুই সন্তানকে লেখাপড়া করানো, বৃদ্ধ মায়ের সেবা এবং মেয়েকে বাল্য বিয়ে না দেয়ার শর্তে মতি মাতবরকে বাড়িতে থাকার সুযোগ দেয়া হলো। শর্ত ভাঙ্গলে তার প্রবেশন বাতিল হয়ে যাবে।
মতি মাতবর সমাজ সেবা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা প্রবেশন অফিসার মো. আজিজুর রহমান মাসুদের অধীনের দেড় বছর প্রবেশনে থাকবেন বলেও রায়ে উল্লেখ করে হাইকোর্ট।
[মিসলিডিং হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে এর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করছে নিউজবাংলা]