যেসব গুমের অভিযোগ সত্য, সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ আছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে গুমের বিষয়ে বিএনপির ক্রমাগত অভিযোগকে মিথ্যাচার বলেছেন তিনি। এমনও বলেছেন, বিএনপি নিজেরাই লুকিয়ে রেখে গুম বলে প্রচার করছে।
জাতীয় শোক দিবস স্মরণে বুধবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কৃষক লীগ।
কয়েক বছর ধরেই গুমের বিষয়টি সামনে আসছে। বিএনপির অভিযোগ ছয় শতাধিক মানুষকে তুলে নেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে। কিন্তু তাদের খোঁজ নেই। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের ঢাকা সফরেও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাচেলেট সরকারকে অভিযোগ অস্বীকার না করে তদন্তের পরামর্শ দিয়েছেন।
এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে গুম খুনের বিচার করবেন। ওবায়দুল কাদের এই বক্তব্যেরও জবাব দেন।
তিনি বলেন, ‘নিজের দলের গুম, হত্যার বিচার কে করবে ফখরুল ইসলাম আলমগীর? নিজেরাই দলের নেতাকে গুম করে হত্যা করেছেন, সেই বিচার বাকি আছে। সেটাও ফাঁস হয়ে গেছে। অহেতুক মিথ্যা গুম খুনের কথা আর কত? সত্যি যারা গুম হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা আছে তাদের জন্য তদন্ত করার।’
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আপনাদের অনেক বিচার বাকি আছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার জিয়াউর রহমান বন্ধ করেছিলেন। তিনি মানুষের আদালত থেকে বেঁচে গেলেও ইতিহাসের আদালত থেকে রেহাই পাননি। শুধু মানুষের আদালতই না, ইতিহাসের আদালতও আছে। আরও অনেক বিচার বাকি আছে মির্জা ফখরুল সাহেব।’
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার থেকে রক্ষা করতে সংবিধানে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংযোজন নিয়েও কথা বলেন কাদের। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। তারও হত্যার বিচার হয়নি।
‘১৫ আগস্ট আসলেই জন্মদিন পালন করে উল্লাস করে বিএনপি। খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া মাহফিল করলে আমাদের ও দেশবাসীর আপত্তি নেই। কিন্তু ভুয়া জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া মাহফিল করলে দেশের জনগণের আপত্তি আছে। সত্যের মুখোমুখি হতে কেন এত ভয় পান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর?’
আওয়ামী লীগকে ভয় না দেখানোর পরামর্শও দেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভয় পাওয়ার দল নয়। আপনারা ভয় পান কেন, ভয়কে যারা জয় করতে জানে না, তারা কাপুরুষ। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। ভয়কে জয় করতে শিখুন।’
বিএনপি নিজেরাই মারামারি করছে
বিএনপির নানা কর্মসূচিতে যে হামলা হচ্ছে, তার দায় বিএনপিকেই দেন। কাদের বলেন, ‘তাদের কিছু নেতাকর্মী মাঠে নামছে। বিএনপির যতগুলো মিটিং আমরা দেখছি সবগুলোতে মারামারি। মারামারি নিজেরা করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, অপবাদ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ বাধা দেয়।’
দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে, মাথা ঠান্ডা করে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা কাউকে আক্রমণ করব না, আমাদের কেউ আক্রমণ করলে পাল্টা জবাব দিতে হবে।’
বিএনপিকে ভোটে আসার আহ্বানও জানান কাদের। বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেন দেখবেন কার কতটুকু জনপ্রিয়তা।’
জামায়াতের বেরিয়ে যাওয়া নাটক
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে জামায়াতে ইসলামীর বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণাকে নাটক বলে উল্লেখ করেন কাদের। বলেন, ‘জামায়াত-বিএনপি মাঝে মাঝে অভিমান করে ছেড়ে যাওয়ার নাটক করলেও ভেতরে ভেতরে তাদের গলায় গলায় খাতির।’
১৯৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া জামায়াতের সম্পর্ক কয়েক বছর ধরেই ভালো ছিল না। ২০২১ সালের শুরুতে বিএনপি এই জোট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়েছিল।
এর মধ্যে গত শনিবার কুমিল্লার রুকনদের উদ্দেশে ভার্চুয়ালি এই বক্তব্যে শফিকুর জানান, বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত দলটির সঙ্গে আলোচনা করেই নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও সিদ্ধান্ত হয় যে জোটে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে তাদের দল।
এই বক্তব্য রাজনীতিতে তোলপাড় তুললেও বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতের প্রশ্নে কোনো কিছু বলতে নারাজ। উল্টো বলেছেন, জবাব না দেয়া তার গণতান্ত্রিক অধিকার।
কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ আশরাফ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী।