জ্বালানির দাম বৃদ্ধির পর সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে কিছুটা রাশ টানে। ফলে গত জুলাই থেকে ঘোষণা দিয়ে যে লোডশেডিং করা হচ্ছিল, সেটি থেকে অচিরেই মুক্তি মিলবে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সরকার জ্বালানি বহুমুখীকরণের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। তা ছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় লোডশেডিং সীমিত রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আশা করা যাচ্ছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে অচিরেই সাময়িক লোডশেডিং থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।’
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের উত্তরে সংসদ নেতা বলেন, ‘দেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এদিক থেকে দেশে কোনো বিদ্যুৎ সংকট নেই। বৈশ্বিক চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার এবং পরিকল্পিত লোডশেড করার মাধ্যমে সৃষ্ট সংকট উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
‘বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেত্রবিশেষে ১ হাজার থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিকল্পিত লোডশেডিং করা হচ্ছে। পরিকল্পিত এ লোডশেডিং শিডিউল বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রাহকদের নিয়মিতভাবে আগেই অবহিত করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে একদিকে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত লোডশেডিংসহ হলিডে স্ট্যাগারিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য রাত ৮টার মধ্যে শপিংমল, দোকানপাট ইত্যাদি বন্ধ করা, এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে রাখা, রুটিন অনুযায়ী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি মেনে চলা, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা এবং আলোকসজ্জা পরিহারে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বকুলের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, দেশে এখন যে জ্বালানি তেল মজুত আছে তা দিয়ে ৩০-৩৫ দিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের জন্য ছয় মাসভিত্তিক চুক্তি হয়ে থাকে। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল নিয়ে দুটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছাবে অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।’
বিকেল ৫টার পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।
অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশে জ্বালানি তেলের মজুতের পরিমাণ পরিশোধিত ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪৮ টন, অপরিশোধিত ৮১ হাজার ৮৪৬ টন। মোট ৭ লাখ ১ হাজার ৯৯৪ টন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেশের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে ডিজেল, জেট ফুয়েল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও মেরিন ফুয়েল এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড ও মারবান ক্রুড অয়েল আমদানি করে থাকে।
জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চাহিদা বিবেচনায় চলতি আগস্টে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার টন ডিজেল, ৫০ হাজার টন জেট ফুয়েল ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন এবং সেপ্টেম্বরে প্রায় ৩ লাখ টন ডিজেল, ২০ হাজার মেট্রিক টন জেট ফুয়েল, ৫০ হাজার টন ফার্নেস অয়েল ও ২৫ হাজার টন অকটেন আমদানির সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় আগস্ট মাসে আরও ২৫ হাজার টন ফার্নেস অয়েল এবং সেপ্টেম্বরে আরও ২৫ হাজার টন ফার্নেস অয়েল ও ১ লাখ ২০ হাজার টন ডিজেল সরবরাহের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের মাধ্যমে পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনের জন্য আগস্ট মাসে প্রায় দুই লাখ টন এবং সেপ্টেম্বরে প্রায় এক লাখ টন ক্রুড অয়েল আমদানি করা হবে। তাছাড়া দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।