জ্বালানি তেলের দর লিটারে ৫ টাকা কমার পর বাস ভাড়া যে হারে কমেছে, তাতে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা কোনো সুবিধা পাবেন না। সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ যে হারে ভাড়া কমিয়েছে, তার সুবিধা পেতে হলে একজনকে যেতে কমে কমপক্ষে ২০ কিলোমিটার।
ডিজেলের দর ১১৪ টাকা থেকে কমিয়ে ১০৯ টাকা করার পরই বলাবলি হচ্ছিল, এই দাম কমার কোনো সুফল সাধারণ যাত্রীরা পাবে না। বুধবার বিআরটিএ বাস মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, তাতে এই ধারণারই প্রমাণ মিলল।
সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া কমবে ৫ পয়সা। অর্থাৎ বাংলাদেশে টাকার সবচেয়ে ক্ষুদ্র একক এক টাকা কমবে ২০ কিলোমিটার গেলে। এখন অবশ্য এক বা দুই টাকার খুচরার ব্যবহার নেই বললেই চলে, বাস ভাড়া, এমনকি কাঁচাবাজারেও কার্যত টাকার ক্ষুদ্রতম এককে পরিণত হয়েছে ৫ টাকা।
এই হিসাবে ২০ কিলোমিটার গেলেও আসলে বাস ভাড়া কমার সুফল পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। এর কারণ কোথাও দূরত্ব ভেদে ভাড়া ১৩ টাকা হলে এমনিতেই আদায় চলে ১৫ বা ২০ টাকা।
বিকেলে বিআরটিএ কার্যালয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জানানো হয়, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে ২ টাকা ৪৫ পয়সা। আর দূরপাল্লায় ৫২ আসনের ভাড়া হবে ২ টাকা ১৫ পয়সা হারে। কোনো বাস যাত্রীদের আরামের জন্য আসন কমালে সেই অনুপাতে ভাড়া বাড়াতে পারবে।
সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘আগামীকাল থেকে এ ভাড়া কার্যকর হবে। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি থাকবে। কোনো অনিয়ম ব্যত্যয় পাওয়া গেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রতিবার ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পর বাসে ওয়েবিলসহ নানা কৌশলে বাড়তি আদায়ের যে অভিযোগ ওঠে, সেটি দেখা যাচ্ছে গত ৬ আগস্ট থেকেও। আগের দিন ডিজেলের দর ৩৪ টাকা করে বাড়ানোর পর বিআরটিএ সেদিন বৈঠক করে ঠিক করে মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে আড়াই টাকা আর সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা।
অর্থাৎ চার কিলোমিটারে ভাড়া হওয়ার কথা ১০ টাকা। তবে রাজধানীতে কয়েক বছর ধরে ওয়েবিল নামে একটি নির্ধারিত দূরত্ব থেকে আরেকটি দূরত্ব পর্যন্ত ভাড়া আদায় করার যে অনিয়ম গড়ে ওঠে, সেভাবে দুই কিলোমিটারেই ১০ টাকা আদায় চলতে থাকে।
পরিবহন মালিকরা ওয়েবিল চলবে না ঘোষণা দেয়ার পরও যাত্রীদের একইভাবে ঠকানো হচ্ছে। এবার ভাড়া কমার পরও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন সচিব।
নিত্যদিন যাত্রীরা ঠকে গেলেও সচিব দাবি করেন, ওয়েবিল নেই।
তিনি বলেন, ‘ওয়েবিলের বিষয়টা আগে যেটা ছিল গাড়িতে উঠলে ভাড়া দিতে হতো সেটা এখন নেই কিন্তু। তবে মালিক শ্রমিকদের জন্য তারা সিস্টেম করেছে। কিন্তু ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। এটার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব।’
রাজধানীতে সিএনজিচালিত বাসেও তেলচালিত বাসের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন সাংবাদিকরা।
এর উত্তরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘মাত্র ৩১৮টি গ্যাসচালিত গাড়ি ঢাকা শহরে চলে। এটি ১০-২০টি কমবেশি হতে পারে।’
আগে বেশি চললেও কেন এ সংখ্যাটি কমে গেছে তার কারণও ব্যাখ্যা করেন এই পরিবহন মালিক।
তিনি বলেন, ‘গ্যাসের মূল্য যখন বৃদ্ধি পেল এবং যেহেতু ডেডিকেটেড ইঞ্জিন না, আমাদের দেশে যে গ্যাসের গাড়ি এখানে চলে, এগুলো ডেডিকেটেড ইঞ্জিন না। এখানে কনভার্সন করে এগুলো করা হয়। দেখা যায়, এতে গাড়িগুলোর আয়ুষ্কাল অনেক কমে যায়। যার ফলে আবার সবাই তেলে ফিরে গেছে, ডিজেলে ফিরে গেছে।’