ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) কারচুপি সুযোগ থাকার অভিযোগ তোলা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আসলে কী চান, সে প্রশ্ন রেখেছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।
ইভিএমে ত্রুটি প্রমাণ করে দিতে পারলে আগামী নির্বাচনে এই যন্ত্র ব্যবহার করা হবে না বলে অন্য এক নির্বাচন কমিশনার যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, সেটি গ্রহণ করেননি বদিউল। বলেছেন, এটা তার কাজ না।
এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘কেন হঠাৎ করে এই সংবাদ সম্মেলন? উদ্দেশ্যটা কী? চ্যালেঞ্জ যদি করতেই হয় সংবাদ সম্মেলনে কেন? আমাদের কাছে এসে চ্যালেঞ্জ করতে অসুবিধা কী?'
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বদিউলের বিষয়ে আহসান হাবিব বলেন, ‘অনেক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ তারা। তাদের সন্দেহ থাকলে কাছে আসেন, দেখেন। প্রত্যেকটা পর্বে পর্বে আমরা ইভিএম দেখার ব্যবস্থা করেছি, তাদের থাকতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘হাতের পাঁচ আঙ্গুল যেমন সমান নয়, কাজেই কারও অসৎ উদ্দেশ থাকতেও পারে। কারচুপির প্রমাণ করতে পারলে আমরা তখন সিদ্ধান্ত দেব।’
কমিশন আগামী নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত জানানোর পর বদিউল একজন প্রযুক্তিবিদকে নিয়ে এসে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আয়োজনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি করেন।
তবে যে প্রযুক্তিবিদকে তিনি নিয়ে আসেন, তিনি ইভিএম দেখেনইনি। আর তিনি যেসব যুক্তি তুলে ধরেন, তার মধ্যে প্রধান ছিল, দেশের অর্থনীতি এখন চাপে। এত টাকা দিয়ে নতুন মেশিন কেনার দরকার নেই।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের উপযোগিতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি: নিউজবাংলা
এর মধ্যে সোমবার নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানান, ইভিএমে কারচুপি করা সম্ভব, এটা যদি বদিউল প্রমাণ করে দিতে পারেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন ভোটে এই যন্ত্র ব্যবহার করবে না।
বদিউল কি এই চ্যালেঞ্জে যাবেন- জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি না বলে দেন।
সুজন সম্পাদক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার কোনো প্রশ্নই আসে না।’
তিনি যুক্তি দেখান, ইভিএম নিয়ে তার প্রমাণ করার কিছু নেই। এটা প্রমাণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব বলেন, ‘আমরা ইভিএম নিয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি, রাজনৈতিক দলের টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বসেছি। তাদেরও ডেকেছি। তারা কিন্তু আসেননি। আমরা পাঁচ মাস ধরে সময় দিয়েছ।’
সুজনের জন্য নির্বাচন কমিশনের দরজা খোলা জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘তারা একদিন না ১০ দিন আসবে, ভীতি কোথায়? চ্যালেঞ্জ যদি করতেই হয়, সংবাদ সম্মেলন কেন চ্যালেঞ্জ। আমাদের এখানে এসে চ্যালেঞ্জ করুক। তারা আমাদের চেয়ে অনেক শিক্ষিত, অনেক বড়। কাজেই আমাদের এখানে এসে চ্যালেঞ্জ করতে অসুবিধা কী?’
বর্তমান কমিশন চার শটা নির্বাচন করেছে জনিয়ে আহসান হাবিব বলেন, ‘এতগুলো নির্বাচন করলাম, কয়জন মারা গেছে? কয়টা জায়গায় অরাজকতা হয়েছে? অনিয়ম হলে সেটা তুলে ধরেন অসুবিধা না্ই।
‘অসততা, অস্বচ্ছতা, পক্ষপাতিত্ব যদি চোখে পড়ে, প্লিজ লেট মি নো। আমাকে জানান, তার প্রতিকার, জবাব দিয়ে তৃপ্ত করে ছাড়ব। কাজ করতে গেলে ভুল হতে পারে। আপনি দেখবেন ইচ্ছাকৃত ভুল হলো কি-না। কাজ করতে গেছে একটা ইচ্ছাকৃত ভুল, আরকেটা হচ্ছে অনিচ্ছাকৃত ভুল। আমাকে পর্যবেক্ষণ করেন।’
নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা অবশ্যই আসবে বলেও মনে করেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘দলগুলোর যে অনাস্থা এটা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আসতে পারে। অতীত থেকে আমরা শিক্ষা নেব। কিন্তু ভবিষ্যত সুন্দর হবে, এটা গ্যারে্ন্টেড।’
আগামীতে সব সিটি করপোরেশন এবং ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর মৃত্যুতে গাইবান্ধায় উপ-নির্বাচনসহ যেখানে ইভিএম হবে সেখানেই ভোটাররা একে ভালো বলবে বলেও মনে করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেকেই থাকে যারা সংকট তৈরি করতে চায়। ঘোলাভাবে শিকার করতে চয়। সরকার থেকে এবং বিরোধী দল থেকে অনেকেই ইভিএম চাচ্ছে। আবার কেউ কেউ আমাকে ইভিএম ‘দিয়েন না, আমার এলাকার অশিক্ষিত মানুষ বেশি’- এমনও বলছে।’
বিদেশের সন্তানের সঙ্গে মেবাইলে ভিডিও কলে যদি কথা বলতে পারে, তাহলে দুটি বোতাম টিপে ইভিএমে ভোট দিতে পারবে না কেন-এই প্রশ্ন তুলে আহসান হাবিব বলেন, ‘কাজেই এটা (এই প্রচার) অসৎ উদ্দেশ্য।'
ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ না মিললেও ভোটারের পরিচয় শনাক্তের ব্যবস্থা আছে বলেও জানান আহসান হাবিব। বলেন, ‘আঙ্গুলের ছাপ না মিললেও যখন নম্বরটা দেয়া হয়, তখন কিন্তু ভোটারের পরিচয় মেলে। আঙ্গুলের ছাপ না মিললে অভাররাইট করলে সেটা কিন্তু সংরক্ষিত থাকছে। আমরা অনেক সময় সেটা নিয়ে ভিডিও কলে কথা বলি।’
‘নির্বাচনে প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের চলতে হবে’- উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিকাশ, রকেট, ইউপে, নগদ, জুম অ্যাপ বিশ্বব্যাপী চলছে।
নির্বাচন কমিশন সততার সঙ্গে, ইমানের সঙ্গে যাচাই বাছাই করে কাজ করবে বলেও নিশ্চয়তা দেন এই নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচনি কর্মকর্তা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘আমরা যোগ্য ও চৌকস কর্মকর্তাদের নেব। আমরা এ ব্যাপারে খুবই নিশ্চিত।’