বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্র্যাক ছাত্রী সানজানার বাবা গ্রেপ্তার

  •    
  • ৩১ আগস্ট, ২০২২ ১৪:০৪

র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সানজানার আত্মহত্যার পর তার মা একটি মামলা করেন। সেখানে সানজানার বাবা সানজানাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন এমন অভিযোগ ছিল। এরপর থেকেই আমরা তাকে খুঁজছিলাম, কিন্তু তিনি ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান। আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাই। বুধবার দুপুরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

রাজধানীর দক্ষিণখানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সানাজানা মোসাদ্দিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় তার বাবা শাহীন ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে অভিযান চালিয়ে বুধবার দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘সানজানার আত্মহত্যার পর তার মা একটি মামলা করেন। সেখানে সানজানার বাবা সানজানাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছেন এমন অভিযোগ ছিল। এরপর থেকেই আমরা তাকে খুঁজছিলাম, কিন্তু তিনি ঘটনার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান। আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে যাই।

‘বুধবার দুপুরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।’

ছাদ থেকে পড়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী সানজানা মোসাদ্দিকার মৃত্যুর পরই জানা গিয়েছিল বাবার হাতে তার নিয়মিত নির্যাতিত হওয়ার কথা। এই তরুণীর এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে এবার জানা গেল আরেকটি ঘটনা। মাসখানেক আগে সানজানা তার প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার করার পর তারা গিয়ে দেখতে পান, তার গলায় বঁটি ধরে আছেন বাবা।

ওই তরুণী জানান, নিয়মিত মারধরের চাপ নিতে পারেননি সানজানা। তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তার মা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর মৃত্যুর জন্য বাবা শাহীন ইসলামকে দায়ী করে তার নামে মামলা করেছেন সানজানার মা উম্মে সালমা।

রাজধানীর বিমানবন্দর মোড়ে হাজি ক্যাম্পের পাশে দক্ষিণখানের বটতলা এলাকার বাড়ি ধানসিঁড়ি ভিলার অষ্টম তলায় নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতেন সানজানা।

মেয়ে এবং তাকে নিয়মিত নির্যাতনের অভিযোগ এনে সালমা দুই মাস আগে শাহীনকে তালাক দিলেও তিনি জোর করেই বাসাতে থাকতেন বলে তথ্য মিলেছে, তবে ঘটনার রাত থেকেই শাহীন পলাতক।

সানজানাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন সুরাইয়া লতা। তার কাছেই জানা গেল সানজানাকে তার বাবার নিপীড়ন-নির্যাতনের কাহিনি।

রাজধানীর দক্ষিণখানের বটতলা এলাকার বাড়ি ধানসিঁড়ি ভিলার অষ্টম তলায় নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকতেন সানজানা। ছবি: নিউজবাংলা

সেটি মাসখানেক আগের কথা। লতা বলেন, ‘ওই বাসা থেকে একজন নক করে বলেন আমাদের বাঁচান। গিয়ে দেখি সানজানার বাবা বঁটি হাতে মেয়েকে মারার জন্য উদ্যত হয়েছেন। আমরা সবাই যাওয়ায় আর মারেনি, তবে এমনভাবে সানজানার ঘাড়ে বঁটি ধরা ছিল যে আঘাত করলেই মারা যেতে পারত মেয়েটি।’

লতা জানান, সেদিন মেয়েটির জীবন বাঁচাতে দীর্ঘ সময় সেখানে অপেক্ষা করেছেন। তিনি বলেন, ‘তখন আমরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি এই ভেবে যে বাইরের মানুষের সামনে হয়তো কিছু করবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে সেখান থেকে আসি।’

আরেক প্রতিবেশী নাজমুন নাহার বলেন, ‘তাদের (শাহীন ও সালমা) এসব ঝগড়াঝাঁটি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। আমি বলেছি, যার সঙ্গে হচ্ছে না, বাদ দেন, কিন্তু রোজ এসব মারামারি চারপাশের পরিবেশ নষ্ট করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সানজানার বাবা আশপাশে প্রচার করেছেন, সে তার সন্তান না। তার স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তানসহ তাকে বিয়ে করেছেন, তবে ঘটনা যাই হোক, জেনেশুনেই উনি সব করেছেন। এভাবে মারামারি তো করতে পারেন না।’

সানজানা মোসাদ্দিকার মৃত্যুর জন্য বাবা শাহীন ইসলামকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার মা উম্মে সালমা। ছবি: নিউজবাংলা

মেয়েকে নিয়মিত মারতেন শাহীন

সানজানার ফ্ল্যাটে ঢুকতেই তার মা উম্মে সালমা জড়িয়ে ধরে শুরু করেন কান্না। মেয়েটির নানিও চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না।

সাংবাদিকদের দেখে বিলাপ করে সানজানার নানি বলছিলেন, ‘তোমরাই পারবা আসল বিচার আইন্যা দিতে। তোমরা তরুণ, তরুণরা ছাড়া কেউ পারবে না।’

পরিস্থিতি একটু শান্ত হতেই সালমা বলতে শুরু করেন সানজানার করুণ কাহিনির বয়ান।

তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রায়ই প্রচুর মারধর করত তার বাবা। মেয়ে সবসময় প্রতিবাদ করত বলে তাকেও মারত। ঘটনার দিন সকালে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমাকে মারতে এলে সানজানা প্রতিবাদ করে। তখন মেয়েকেও প্রচুর মারধর করে।

‘মেয়েকে পড়াতে চাইতেন না বাবা। সেমিস্টারের টাকা চেয়েছে বলেও মারধর করেছে অনেক।’

সালমা জানান, মাস কয়েক আগে শাহীনের আরও একটি বিয়ে করার তথ্য জানতে পারেন তিনি। এটি সানজানাকে ভীষণ আহত করে।

তিনি বলেন, ‘সেই ঘরে তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। একদিকে বাবার অত্যাচার এবং দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনায় সানজানা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।’

কতদিন ধরে এমন অবস্থা চলেছে জানতে চাইলে সালমা বলেন, ‘সানজানার বাবা আগে ড্রাইভার ছিল। ৫ বছর ধরে অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে।

‘আমি অনেক ছোট থাকতে ১৪ বছর বয়সে তাকে পালিয়ে বিয়ে করি। আমার মা-বাবা শুরুতে রাজি না থাকলেও পরে এই বিয়ে মেনে নেন। শাহীনকে প্রতিষ্ঠিত করতে তাই বারবারই টাকা দিতেন তারা।’

সালমা জানান, তার বাবা-মা শাহীনকে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত করতে জমি বিক্রির ৫৭ লাখ টাকা দেন, কিন্তু মুফতে পাওয়া সেই টাকা তিনি উড়ান আর বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করেন।

সালমার অভিযোগ, বাসার কাজের মেয়ের সঙ্গে জোরপূর্বক শাহীনের শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টি জানার পর সেই মেয়েটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর