‘বাংলাদেশে গুম ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে সব তথ্য দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি তার ঢাকা সফরকালে তাকে সার্বিক বিষয়েই জানানো হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের সংকটগুলো বুঝতে পেরেছেন।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অব্যাহত মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে আসছিল। এভাবে বানোয়াট তথ্যে একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়।
‘আমি স্পষ্ট করতে চাই, বাংলাদেশ আমন্ত্রণ জানিয়েই মিশেল ব্যাচেলেটকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিল। তাকে বলেছিলাম- আসুন, দেখে যান বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি। যাদের সঙ্গে কথা বলতে চান বলুন।
‘মিশেল ব্যাচেলেট এসেছেন, দেখেছেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এখানে অন্য কিছু নেই। এটাকে অনেকেই অন্যভাবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। বিষয়টিকে ভিন্ন পথে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সুশীল সমাজের কেউ আছেন, যাদের কাজই হলো সবকিছু বাঁকাভাবে দেখা।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে ষড়যন্ত্র সব সময়ই ছিল, এখনও আছে। বিরোধী দল নামে একটি জাতীয়তাবাদী শক্তি এই সফর ঘিরে নানা গল্প বলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে এ সফর হলেও ভিন্নভাবে নেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। মানবাধিকারকে অনেকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চায়।
‘জনবিচ্ছিন্ন এসব দল হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। সুশীল সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে বলেছিল। মিশেল ব্যাচেলেট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দেখা করতে আসেননি। জাতিসংঘের সংস্থা কিভাবে চলে, সে ব্যাপারে তাদের ন্যূনতম ধারণা নেই।’
‘এই সরকার এনগেজমেন্টে বিশ্বাস করে। দেশের গণমাধ্যম প্রায়োরিটি এজেন্ডা ছাড়া অন্যান্য বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেনি।’
শাহরিয়ার আলম জানান, জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল জেনেভায় অবস্থিত। তাদের নয়টি অঙ্গের আটটিতেই অনুস্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। সাতটি বাংলাদেশ ডিফাইন করে এবং এর সবই হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।
‘পৃথিবীর অনেক দেশই কিন্তু এটাকে পাত্তা দেয় না। কারণ এটা খুব কঠিন। প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর প্যানেল অফ এক্সপার্টস প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেয়। জাতীয়তাবাদী দল কখনও এসবের মুখোমুখি হয়নি। হতে চায়ওনি। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে বলে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
‘৯টি কনভেনশন নিয়ে কিন্তু সুশীল সমাজ কাজ করে না। তারা শুধু হত্যা, গুম, খুন নিয়ে কথা বলে। এসডিজির পরতে পরতে সুশীল সমাজের কথা বলা থাকলেও তারা রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট। বর্তমান সরকারকে উৎখাত করতে যখন বলা হয়, তখন মিশেল এটা বুঝতে পারার কথা। তিনি নিজেও চিলিতে স্ট্রাগল করা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অনেক কিছু বলার আছে। রাইট ফর ডেভলপমেন্ট, এলডিসি গ্রাজুয়েশন, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে এই সুশীল সমাজ কথা তো বলে না। তারা শুধু আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে কথা বলে যাচ্ছে।
যে কারণে ওই দলগুলো ক্ষমতায় নেই, সেগুলো সংশোধন করতে হবে। জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। তা না হলে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা সম্ভব হবে না।’
ব্যাচেলেটের নিরপেক্ষ মেকানিজম প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের সদিচ্ছা সরকারের আছে। পলিটিক্যাল ডায়ালগে সরকার এনগেজড। উই আর নট অলয়েজ পারফেক্ট। ইটস এ কনটিনিউয়াস প্রসেস। এটা নিয়ে কাজ হবে।’
তিনি বলেন, ‘গুমের কথা বলে ৭৬টি নামের তালিকার কথা বলা হয়। এগুলো ২০/২২ বছর আগের ঘটনা। তখন আওয়ামী রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল না। অথচ সেসবের জন্য এই সরকারকে দোষারোপ করা হয়। এর মধ্যে ১০ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে।
‘হেফাজতের তাণ্ডবের সময় এতোজন মারা গেছে, গুম হয়েছে বলে গুজব রটানো হয়। কিন্ত সে সময় পালিয়ে থাকা সবাই কিন্তু ফিরে এসেছে। তাদের কথা গণমাধ্যমে আসেনি। ৬৬ জনের ২৮ জনই ছিল দাগি আসামি। পাশের কোনো রাষ্ট্র বা দূরবর্তী রাষ্ট্রে তারা লুকিয়ে থাকতে পারে। ১১ জন সম্পর্কে তাদের পরিবার থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সবাইকে খুঁজে বের করা যাবে, এমনটা আশা করাও যায় না।’