নানা সমালোচনা সত্ত্বেও ওষুধের দোকান একটি নির্ধারিত সময়ের পর এখনও বন্ধ রাখতে চান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
মেয়রের পরিকল্পনা নাকচ করে দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এসব দোকান ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখা যাবে। কারণ, এগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য। তবে মেয়র এটা বুঝতে চাইছেন না।
পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিশ্চিত না করে ২৪ ঘণ্টা ওষুধের দোকান খোলা রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল-সংযুক্ত ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা আমরা দেখি না। কারণ, যেখানে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সুনির্দিষ্ট সময়ের পর, শুক্র-শনিবার এবং রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, সেখানে ওষুধের দোকান কেন খোলা রাখা হবে?
‘আগে তো চিকিৎসক নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই তো চিকিৎসাসেবার জন্য ওষুধের দোকান খোলা রাখতে হবে। তারপরও কোনো হাসপাতাল থেকে যদি লিখিত কোনো আবেদন আসে, আমরা অবশ্যই সেটা বিবেচনা করব।’
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকান রাত ১২টা পর্যন্ত এবং হাসপাতালের কাছাকাছি ওষুধের দোকান রাত ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানায়।
জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা বলে জারি করা এই নির্দেশ নিয়ে তুমুল সমালোচনা ওঠার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই পরিকল্পনা নাকচ করে বলেন, ওষুধের দোকান জরুরি বিষয়। সেখানে কোনো সময়সীমা থাকা চলবে না।
এর মধ্যে মঙ্গলবার বিকেলে নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটোরিয়ামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের ষোড়শ করপোরেশন সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মেয়র তাপস।
দোকানপাট ও ওষুধের দোকান নিয়ে গত ২২ আগস্ট জারি করা বিজ্ঞপ্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গণবিজ্ঞপ্তির সময়সূচি ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। শুধু হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ওষুধের দোকানগুলো খোলা রাখার বিষয়ে বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অংশীজন যারা, তারা কিন্তু আমাদের কাছে কোনো লিখিত আবেদন করেননি।’
তিনি বলেন, ‘(সময়সীমার) বাইরে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়, তাহলে সিটি করপোরেশনের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে।
‘সেখানে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কেন অত্যাবশ্যকীয় সেটা দেখাতে হবে। আমরা সেটা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কার্যক্রমকে বর্ধিত সময় দেব। কিন্তু ঢাকা শহরকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যে আনতেই হবে।’
তাপস বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি সময়সূচি ঠিক করেছি। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এটা কার্যকর করতে চাই। সেখানে দোকানপাট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, রেস্তোরাঁর রান্নাঘর ও খাবার সরবরাহ, চিত্তবিনোদনসহ প্রেক্ষাগৃহ ইত্যাদির জন্য সমসয়সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধের দোকানগুলোর জন্য বিশেষভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
‘পাড়া-মহল্লার ওষুধের দোকানের জন্য আমরা রাত ১২টা পর্যন্ত সময় দিয়েছি এবং হাসপাতালের সঙ্গে যে ওষুধের দোকানগুলো রয়েছে, সেগুলোকে রাত ২টা পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।’
ঘোষিত সময়সূচি বাস্তবায়নে কাউন্সিলরদের নির্দেশনা দিয়ে মেয়র বলেন, ‘আপনারা অবশ্যই এই সময়সূচি নিশ্চিত করবেন। এলাকা, পাড়া-মহল্লায় যাতে সবাই সূচি মেনে কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে, সেটি নিশ্চিত করবেন। এর ব্যত্যয় হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
সময়সূচির সঙ্গে করপোরেশনের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম ও শহরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘শুধু অবকাঠামো উন্নয়নেই একটি শহরকে পরিচালনা করা যায় না। তার সঙ্গে সঙ্গে আনুষঙ্গিক যত বিষয় রয়েছে সেগুলোরও সংযোগ রয়েছে।
‘নির্দিষ্ট সময়সূচির সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা জড়িত। যখন সবকিছু একটি সূচির আওতায় আসবে, তখন আমরা কার্যক্রমগুলো আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারব। ঢাকাবাসীকে ফলপ্রসূ ও কার্যকর সেবা প্রদানের পাশাপাশি একটি উন্নত ঢাকা উপহার দিতে পারব।’
করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া কাউন্সিলররা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।