বিশ্বরেকর্ড গড়তে সোমবার সকালে সিলেট থেকে সাঁতার শুরু করেছিলেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। অবিরাম সাঁতরে ২৮৫ কিলোমিটার পাড়ি দেয়ার লক্ষ্য ছিল তার। কিন্তু ৮৩ কিলোমিটার গিয়েই অসুস্থতার জন্য থেমে যেতে হলো সত্তরোর্ধ্ব এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
একুশে পদক পাওয়া ক্ষিতীন্দ্র মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে সুনামগঞ্জ থানার রঙ্গারচর ইউনিয়নের হরিপাটি নামক এলাকায় সুরমা নদীতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে নৌকায় তোলা হয় এবং যাত্রা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
ক্ষিতীন্দ্রের এই বিশ্বরেকর্ড গড়ার মিশনে তার সঙ্গে ছিলেন সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল।
সুব্রত বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল আর নদীর পানিও প্রচুর ঠাণ্ডা ছিল। তাই মঙ্গলবার সকাল থেকেই তার (ক্ষিতীন্দ্র) শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।’
সুব্রত আরও বলেন, ‘আমরা বারবার থেমে যাওয়ার অনুরোধ করলেও উনি ওনার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। সাঁতার চালিয়ে যান। কিন্তু দুপুরের দিকে তার শরীর অবশ হয়ে আসছিল। এরপর সঙ্গে থাকা ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের সহায়তায় তাকে নৌকায় তোলা হয়। এ সময় চিকিৎসকরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।’
চিকিৎসকরা শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় ক্ষিতীন্দ্রকে সাঁতার বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকরা ক্ষিতীন্দ্রকে সাঁতার চালিয়ে না যাওয়ার পরামর্শ দেন
সুব্রত জানান, ততক্ষণে ৩৩ ঘণ্টা সাঁতার কেটে প্রায় ৮৩ কিলোমিটার জলপথ পাড়ি দিয়েছিলেন ক্ষিতীন্দ্র।
এর আগে বিশ্বরেকর্ড গড়তে সোমবার সকালে সিলেট নগরীর সুরমা কিনব্রিজ পয়েন্টসংলগ্ন চাঁদনীঘাট থেকে সাঁতার শুরু করেন ক্ষিতীন্দ্র। ২৮৫ কিলোমিটার সাঁতরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ফেরিঘাটে পৌঁছানোর কথা ছিল তার। এতে প্রায় ৭০ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে তিনি ধারণা করেছিলেন। এইটুকু পথ সাঁতরে যেতে পারলে টানা সাঁতারের বিশ্বরেকর্ড হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ক্ষিতীন্দ্রের সাঁতারের নেশা ছিল ছাত্রজীবন থেকেই। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটানা ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট এবং ১৯৭৬ সালে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট অবিরাম সাঁতার কেটে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন।
এ ছাড়া ২০১৮ সালে টানা সাঁতার কেটে ১৮৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি।
ক্ষিতীন্দ্র জানান, ১৯৭০ সাল থেকেই তিনি দূরপাল্লার বা অবিরাম সাঁতারের সঙ্গে জড়িত। সে বছর নিজের থানা নেত্রকোণার মদনে টানা ১৫ ঘণ্টা সাঁতার কেটেছিলেন। পরের বছর দেশ স্বাধীনের নেশায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭৩ সালে সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে টানা ৮২ ঘণ্টা সাঁতার কাটেন তিনি।
এবার সাঁতার শুরুর আগে ক্ষিতীন্দ্র বলেছিলেন, ‘আমার এবারের লক্ষ্য ২৮৫ কিলোমিটার। যদি সফল হই, তাহলে বয়স্ক সাঁতারু হিসেবে এটা একটা বিশ্বরেকর্ড হবে।’
ক্ষিতীন্দ্র ১৯৫২ সালের ২৩ মে নেত্রকোণার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিলেটের এমসি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।