পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরেও গ্রাহক পর্যায়ে সারের দাম বেশি হওয়ার পেছনে প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
সচিবালয়ে ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ফাম ভিয়েত চিয়েনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন চাষিরা ধান লাগানোর জন্য পাগল হয়ে গেছেন। তাদের সারও কিনতে হয়। হয়তো ডিলার বলতেছেন গাড়ি আসেনি বা কোনো কারণে আজকে সার নেই, কাল আসেন। কৃষক হয়তো বলেন না থাকলেও কিছু দাও, তখন চালাকি করে কারসাজি করে দাম বেশি নিচ্ছেন।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ডিসি, এসপি, কৃষি কর্মকর্তাদের টেলিফোন করি, সবাই বলে আমাদের এখানে সারের কোনো সমস্যা নেই। আমাদের গুদামে সারের সংকট নেই, গত বছরের চেয়ে এবার বেশি সার দিচ্ছি। তারপরও কেন দাম বাড়বে। এখানে আমাদের প্রশাসনের কিছুটা ব্যর্থতা নিশ্চয়ই আছে। দাম বাড়ার তো কোনো কারণ নেই। সংকট নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের লোক থাকতে পারে, সেটাও আমরা দেখছি। খুব শক্তভাবে, কঠোরভাবে আমরা এটা করার চেষ্টা করছি। রংপুর ও বগুড়ায় এটা বেশি হয়েছে, আমরা এগুলো তদন্ত করছি।’
সম্প্রতি আমন চাষের ভরা মৌসুমে বগুড়ায় সার না পাওয়ার অভিযোগ করেন কৃষকরা। তারা সারের দাবিতে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভও করেন। তবে সরকারের দিক থেকে সব সময় বলা হচ্ছে, সারের কোনো সংকট নেই।
এমন অবস্থায় সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি বা কারসাজি করলে জরিমানার পাশাপাশি ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি জানান, অনিয়মের অভিযোগে চলতি আগস্ট মাসে সারা দেশে ৩৮৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত ৩৮৩ জন ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীকে ৫৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘যশোর জেলায় সবচেয়ে বেশি ৬০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহে ৩৫টি, নওগাঁয় ৩১টি, ঠাকুরগাঁও ও নড়াইলে ২০টি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।
‘নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যারা অনিয়ম করেছে তাদের লাইসেন্স বাতিল করার। লাইসেন্স দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। আমরা তাদের কাছে সুপারিশ পাঠাচ্ছি, তারা এটা পরীক্ষা করবে এবং অনেক ডিলারের লাইসেন্স বাতিল হবে বলে আমরা মনে করছি।’
দেশে সারের কোনো সংকট নেই বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী। বলেন, ‘আগস্টে আজকে পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে আমদানি করা ১ লাখ ৮০ হাজার টন এমওপি সার দেশে পৌঁছেছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ১ লাখ ১৬ হাজার টন সার দেশে পৌঁছাবে। অন্যদিকে, সেপ্টেম্বরে ৫১ হাজার টন ও অক্টোবরে ৭০ হাজার টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। ফলে চাহিদার চেয়ে মজুত অনেক বেশি হবে।’
তিনি বলেন, ‘চাহিদার বিপরীতে দেশে সব রকমের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। বর্তমানে (২৫ আগস্ট) ইউরিয়া সারের মজুত ৬ লাখ ৫৬ হাজার টন, টিএসপি ৩ লাখ ৯৪ হাজার টন, ডিএপি ৮ লাখ ২৩ হাজার টন, এমওপি ২ লাখ ৭৩ হাজার টন।’
এ ছাড়া মজুতের বিপরীতে আমন মৌসুমে (আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত) সারের চাহিদা রয়েছে ইউরিয়া ৬ লাখ ১৯ হাজার টন, টিএসপি ১ লাখ ১৯ হাজার টন, ডিএপি ২ লাখ ২৫ হাজার টন, এমওপি ১ লাখ ৩৭ হাজার টন।
আগের বছরগুলোর তুলনায় এই সময়ে সারের মজুত বেশি রয়েছে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক।