বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নাটক সাজাচ্ছে, তবে খালেদাকে আর দয়ার সুযোগ নেই: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ৩০ আগস্ট, ২০২২ ১৫:৪৬

‘এখন উনি (খালেদা জিয়া) সেজেগুজে মেকাপ নিয়ে, একেবারে ভ্রুট্রু এঁকে হাসপাতালে যান, আর এদিকে আবার তার ডাক্তাররা রিপোর্ট দেয় খুবই খারাপ অবস্থা, একেবারে নাকি যায় যায়। তার লিভার নাকি পচে শেষ। লিভার সাধারণত পচলে মানুষ কী বলে, সেটা আমি মুখ দিয়ে বলতে চাই না। কী খেলে তাড়াতাড়ি লিভার পচে?’

সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিয়ে বিএনপি নাটক সাজাচ্ছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, দলটি আবার তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি তুলবে।

নানা সময় বিএনপি নেত্রীর জীবন সংকটে, দেশে চিকিৎসা নেই বলার পরও তার সুস্থ হওয়ার প্রসঙ্গও তুলে ধরেছেন সরকারপ্রধান।

বিএনপি যত চেষ্টাই করুক না কেন, দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে যেতে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তার মতে, বায়োবৃদ্ধ বলে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে কারাগার থেকে বিএনপি নেত্রীকে ঘরে ফিরতে দেয়ার মধ্য দিয়ে যথেষ্ট দয়া দেখানো হয়েছে। নতুন করে দয়া দেখানোর কিছু নেই।

জাতীয় শোক দিবস স্মরণে মঙ্গলবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনায় অন্যান্য নানা বিষয়ের সঙ্গে এই প্রসঙ্গটিও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে যান বেগম খালেদা জিয়া। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে ওই বছরের অক্টোবরে। একই সপ্তাহে বিচারিক আদালতে ঘোষিত হয় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা, যাতে ৭ বছরের কারাদণ্ড হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর।

১৭ বছরের সাজা নিয়ে বিএনপি নেত্রীর জামিনের আবেদন যখন বারবার উচ্চ আদালত নাকচ করছিল, তখন ২০২০ সালের মার্চে করোনা হানা দেয় দেশে। সে সময় বিএনপি নেত্রীর পরিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন নিয়ে গেলে তিনি তার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করলে ২৫ মার্চ মুক্তি পান বিএনপি নেত্রী। এরপর আরও চার দফায় বাড়ানো হয় সাময়িক মুক্তির মেয়াদ।

এই মুক্তির সময় দুটি শর্ত দেয়া হয় যার একটি ছিল বিএনপি নেত্রী দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। যদিও মাঝে কয়েকবার বিএনপি নেত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর দল এবং পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি ওঠে। একবার বিএনপির পক্ষ থেকে এমনও বলা হয়, তাদের নেত্রীর জীবন সংকটে। এমনকি তার জন্য সারা দেশে দোয়ার আয়োজনও করা হয়।

সে সময় বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার দলীয় চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশে তাদের নেত্রীর রোগের চিকিৎসা নেই। বিদেশ যেতে না দিলে তিনি মারা যেতে পারেন।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপি নেত্রীর সাময়িক মুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে তিনি আবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর বিএনপির পক্ষ থেকে আবার তাদের নেত্রীকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি তোলা হচ্ছে।

খালেদার এই হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে বিএনপি নাটক সাজাচ্ছে বলেও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গাড়িতে করে উনি (খালেদা জিয়া) হলুদ শাড়ি পরে হাসপাতালে গেলেন। এখন রিপোর্টে খুবই খারাপ অবস্থা। বিদেশে না পাঠালে নাকি চিকিৎসা হবে না। এভারকেয়ার তো চমৎকার চিকিৎসা করেছে। সব থেকে আধুনিক চিকিৎসা, সব থেকে এক্সপেনসিভ চিকিৎসা তাকে দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আসামিকে কে কবে বিদেশে পাঠায় চিকিৎসার জন্য। তাহলে তো কারাগারে আর কোনো আসামি বাদ থাকবে না। সবাই দাবি করবে, আমাদেরকেও তাহলে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। আমরা কি সবাইকে পাঠাব?’

আর দয়া দেখানোর ‍সুযোগ নেই

দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাসায় ফিরতে সুযোগ দেয়াকেই যথেষ্ট বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে যথেষ্ট দয়া দেখানো হয়েছে। এর বেশি দয়া দেখানোর সুযোগ নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকে বিদেশে পাঠাও। আহ্লাদের আর শেষ নেই! পৃথিবীতে কোন দেশে আছে! এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি জেলে ছিল। অন্তত আমি এটুকু দয়া করেছি, ঠিক আছে বয়োবৃদ্ধ মানুষ বা অসুস্থ, হাঁটতে চলতে উঠতে বসতে অসুবিধা, শুলে একজন না ধরলে উঠতে পারে না, জেলখানায় যখন এ অবস্থা দেখেছি, ঠিক আছে যেটুকু আমার ক্ষমতা আছে, এক্সিকিউটিভ যে পাওয়ার আমার আছে তার মাধ্যমে তাকে আমি তার বাসায় থাকার সুযোগটা করে দিয়েছি।

‘এখন উনি (খালেদা জিয়া) সেজেগুজে মেকাপ নিয়ে, একেবারে ভ্রু-ট্রু এঁকে হাসপাতালে যান, আর এদিকে আবার তার ডাক্তাররা রিপোর্ট দেয় খুবই খারাপ অবস্থা, একেবারে নাকি যায় যায়। তার লিভার নাকি পচে শেষ। লিভার সাধারণত পচলে মানুষ কী বলে, সেটা আমি মুখ দিয়ে বলতে চাই না। কী খেলে তাড়াতাড়ি লিভার পচে?’

কোন মুখে আমার কাছে দাবি জানায়

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আইনি সুরক্ষা দিয়ে রক্ষা করা, তাদেরকে সংসদ সদস্য বানিয়ে ক্ষমতা কাঠামোতে আনায় বিএনপিকে তুলোধোনাও করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে বলে কোন মুখে? জিয়াউর রহমান আমার বাবা, মা, ভাই, তাদেরকে হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি দিয়ে খুনিদেরকে ক্ষমা করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। এরশাদ এসে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিল। রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিল। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আরও একধাপ।

‘১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬। সেই নির্বাচনের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। ভোটারবিহীন নির্বাচন খালেদা জিয়া করেছিল। সেই নির্বাচনে কর্নেল রশিদ, ফারুক আর হুদা প্রার্থী। ফারুককে জেতাতে পারেনি। রশিদ আর হুদাকে জেতাল। হুদাকে এনে পার্লামেন্টে বসাল এই খালেদা জিয়া।’

বিএনপি নেত্রীর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে ফিরে আসা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘যে এ ধরনের ঘটনা ঘটাল তার জন্য আমাদের কাছে এত করুণা, দয়া চায় কীভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন, বারবার যারা আমাকে হত্য করতে চেয়েছে, তারপরেও তো আমরা করেছি করুণা। অনেক দয়া দেখানো হয়েছে। এর বেশি আর দয়া আমাদের পক্ষে দেখানো সম্ভব না।’

‘আমি অনেক দুঃখে কথাগুলো বললাম’ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নানা রকম অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা চলছে।’ দলের নেতাকর্মীদের এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কথাও বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সংঘাত চাই না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেটা আমাদের দেখিয়ে গেছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর