বয়স ৭০ পেরিয়েছে। তবুও টগবগ তারুণ্য। কেবল মনে নয়, শরীরেও এই তারুণ্য ধরে রেখেছেন ক্ষিতীন্দ্র। তাই এই বয়সে এসেও সাঁতার কেটে ২৮৫ কিলোমিটার পাড়ি দেয়ার মিশনে নেমেছেন তিনি।
পুরো নাম ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। একাত্তরের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পেয়েছেন একুশে পদকও।
বিশ্বরেকর্ড গড়তে সোমবার সকালে সিলেট থেকে ২৮৫ কিলোমিটার সাঁতার শুরু করেছেন ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য। নগরীর সুরমা কিনব্রিজ পয়েন্টসংলগ্ন চাঁদনীঘাট থেকে সাঁতার শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ পথ সাঁতরিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব ফেরিঘাটে পৌঁছাবেন তিনি। এতে প্রায় ৭০ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে তার ধারণা। এইটুকু পথ সাঁতরে যেতে পারলে টানা সাঁতারের বিশ্বরেকর্ড হবে বলেও জানান ক্ষিতীন্দ্র।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে সাঁতার আমার নেশা। আমি একজন অবিরাম শৌখিন সাঁতারু। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটানা ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট এবং ১৯৭৬ সালে ১০৮ ঘণ্টা ৫ মিনিট অবিরাম সাঁতার কেটে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করি।
‘২০১৮ সালে ১৮৫ কিলোমিটার দূরপাল্লার সাঁতার কাটি, যা ছিল আরেকটি স্থানীয় রেকর্ড।’
১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটানা ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট সাঁতার কেটে রেকর্ড করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে রুপার নৌকা দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।
কিশোরগঞ্জের ভৈরব ফেরিঘাটে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে সাঁতরে যাচ্ছেন ক্ষিতীন্দ্র
ক্ষিতীন্দ্র জানান, ১৯৭০ সাল থেকেই তিনি দূরপাল্লার বা অবিরাম সাঁতারের সঙ্গে জড়িত। সে বছর নিজের থানা নেত্রকোণার মদনে টানা ১৫ ঘণ্টা সাঁতার কেটেছিলেন। পরের বছর দেশ স্বাধীনের নেশায় মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯৭৩ সালে সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে টানা ৮২ ঘণ্টা সাঁতার কেটেছিলেন তিনি।
ক্ষিতীন্দ্র বলেন, ‘আমার এবারের লক্ষ্য ২৮৫ কিলোমিটার। যদি সফল হই, তাহলে বয়স্ক সাঁতারু হিসেবে এটা একটা বিশ্বরেকর্ড হবে।’
ক্ষিতীন্দ্রের সাঁতার শুরুর সময় উপস্থিত সিলেট জেলা নৌ-পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির আহমদ বলেন, ‘জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, নৌ-পুলিশসহ সিভিল সার্জনের একাধিক টিম তাকে অনুসরণ করবে।’
ক্ষিতীন্দ্র ১৯৫২ সালের ২৩ মে নেত্রকোণার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিলেটের এমসি কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।