বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইভিএম নিয়ে বদিউলকে নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ

  •    
  • ২৯ আগস্ট, ২০২২ ১৭:৩২

যিনি বলছেন, তাকে প্রমাণ দিতে হবে। উনি যদি আমাদের কাছে এসে দেখতে চান, জানতে চান, আমার উত্তর দেবো। উনি যদি প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে বাতিল করে দেবো: নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কারচুপি করা সম্ভব বলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার যে দাবি করেছেন, তার পক্ষে প্রমাণ দেয়ার চ্যালেঞ্জ এসেছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, বদিউল যদি তার দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে ভোট ইভিএমর ব্যবহারের সিদ্ধন্ত বাতিল করা হবে।

সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন এই নির্বাচন কমিশনার।

বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

যারা এর বিরোধিতা করছে, তাদের অভিযো ইভিএমে কারচুপি সম্ভব। যদিও নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে প্রযুক্তিবিদ নিয়ে এই অভিযোগ প্রমাণের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল। তবে কোনো দল কারচুপির পক্ষে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।

এর মধ্যে রোববার বদিউল রাজধানীতে এক আলোচনায় বলেন, ‘ইভিএম একটি দুর্বল যন্ত্র। নির্বাচন কমিশন বলছে, ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই। এটি নির্ভুল প্রমাণের দায়িত্ব কমিশনের।’

এই অভিযোগের সপক্ষে বদিউলের অভিযোগের পক্ষে জোরাল প্রমাণ নেই। তিনি বলেন, ‘ইভিএমের নিয়ন্ত্রণ বাইরের কারও হাতে না থাকলেও নির্বাচন কমিশন ও কর্তাব্যক্তিদের হাতে আছে।’

এই আয়োজনে বদিউল একজন প্রযুক্তিবিদকে হাজির করান। তার নাম ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তার বক্তব্যও সুনির্দিষ্ট নয়। তিনি বরং অর্থনৈতিক কারণ তুলে ধরেন। বলেন, ‘অর্থনৈতিক এই সংকটে নতুন করে ইভিএম কিনে ডলার খরচ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

তৈয়্যবের মতে, ‘ইভিএমের অন্য বিষয়গুলো ডিজিটাল হলেও ফলাফল তৈরি প্রক্রিয়া ডিজিটাল নয়। ম্যানুয়াল হওয়ায় অস্বচ্ছতা ও কারচুপির সুযোগ আছে।’

সেই আলোচনা শেষে একজন গণমাধ্যমকর্মী তৈয়্যবের কাছে জানতে চান, তিনি ইভিএম মেশিন দেখেছেন কি না। ‘না’ জবাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্যার (বদিউল) দেখেছেন।’

এনজিও কর্মী বদিউল আলম মজুমদার দাবি করেছেন, ইভিএমে কারচুপি সম্ভব। তাকে সেই দাবি প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন

ইভিএম নিয়ে বদিউলের অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘যিনি বলছেন, তাকে প্রমাণ দিতে হবে। উনি যদি আমাদের কাছে এসে দেখতে চান, জানতে চান, আমার উত্তর দেবো। উনি যদি প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে বাতিল করে দেবো।

‘বাইরে কে কী বলল, তা দেখে তো আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে আমাদের কাছে এসে যদি বলে যে প্রমাণ করতে পারে যে ইভিএমে কারচুপি করা যায়, তা প্রমাণ করে দিয়ে গেলাম, তাহলে ইভিএমে ভোট হবে না।’

১৫০ আসনের ইভিএমে ভোট করার সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইসি সচিবালয় বলেছে। সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা।’

বর্তমানে যতগুলো ইভিএম আছে, সেগুলো দিয়ে এত আসনে ভোট নেয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে নতুন মেশিন কিনতে হবে।

নতুন কত মেশিন কেনা হবে-এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অস্থিরতা আছে। এখন কতটুকু কেনা সম্ভব হবে সেটা বলতে পারছি না।

‘আমরা বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ইভিএম নেই। তারাও তো নিজেরা তৈরি করে না, বিদেশে থেকে আনে। সচিবালয় বলেছে আগামী তিন মাসের মধ্যে তারা প্রজেক্ট করতে পারবে। পরবর্তীতে ক্রয় ও প্রশিক্ষণে তারা যেতে পারবে বলে মনে করছে। যদি বিদেশ থেকে আনতে এবং ফান্ড নিয়ে কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে ১৫০ আসনে সম্ভব।’

ভোটে না আসা গণতান্ত্রিক অধিকার

বিএনপি ও সমমনাদের ভোট বর্জনের ঘোষণার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার নেই বলেও মন্তব্য করেন মো. আলমগীর।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনো দল নির্বাচনে আসা, না আসা গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই অধিকার আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারব না।

‘তারা কী ধরনের সহযোগিতা চয় তা আমাদের কাছে এসে বলতে হবে। এমন সহায়তা চাইতে হবে যেটা নির্বাচন কমিশনের দেয়ার ক্ষমতা আছে। এখন একটা দল যদি বলে আমাদের ফান্ড দিতে হবে, সেটা দেওয়ার ক্ষমতা তো আমাদের নেই।’

‘ভোটে সেনা থাকবে, তবে বিচারিক ক্ষমতা নয়’

আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটে সেনাবাহিনী মোতায়েন হলেও তাদেরকে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হবে না বলেও জানান মো. আলমগীর। বলেছেন, এই ক্ষমতা দিতে হলে দেশে আইনের মৌলিক পরিবর্তন করতে হবে।

এই কমিশনার বলেন, ‘সেনাবাহিনী একটি নির্দিষ্ট এলাকায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে। তারা টহল দেবে।’

ভোটে সেনা মোতায়েন আওয়ামী লীগ ও সমমনা ছাড়া প্রায় সবার দাবি। সেনাদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা দেয়ার দাবিও তোলা হয়েছে কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন দলের সংলাপে।

নিজ কার্যালয়ে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর

তবে বিচারিক ক্ষমতা দেয়া সম্ভব নয় জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘এক্ষেত্রে মৌলিক আইন পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া যিনি ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন, তার হাতে বিচারিক ক্ষমতা থাকে না। মূল কথা হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী সহযোগিতা করবে।’

সেনাবাহিনী সব কেন্দ্রে মোতায়েন থাকবে না বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘তাহলে তাদের আকার অনেক বড় করতে হবে।’

তাহলে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে- এমন প্রশ্নে মো. আলমগীর বলেন, ‘জোরপূর্বক কেউ ভোট দিতে চাইলে প্রথমে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেবেন। তারা কুলিয়ে ওঠতে না পারলে বিজিবি কিংবা সেনার সহায়তা নেবেন।

‘আমাদের কন্ট্রোল রুম থাকে, সবার হাতে মোবাইল আছে, সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বিজিবি যাবে, বিজিবি না পারলে সেনাকে ডাকবে।’

তবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে না বলে আশাবাদী নির্বাচন কমিশন। আলমগীর বলেন, ‘হয়তো লাখে একটা এমন ঘটনা ঘটতে পারে। সেটা হলে সে নির্বাচন বন্ধ থাকবে। পরবর্তী তারিখে আবার নির্বাচন হবে।’

সব কেন্দ্রে না হলে কোথায় সেনাবাহিনী থাকবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের কথা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই একটা রিপোর্ট নেই বিভিন্ন সূত্র থেকে যে, কোন কেন্দ্রগুলো ভালনারেবল হতে পারে। র‌্যাব, বিজিবি, সেনার কাছে সেই তালিকা আমরা দেই। তারা পর্যালোচনা করে কোথায় সেনা, কোথায় র‌্যাব, কোথায় বিজিবি… তারা আলোচনা করে সেই সিদ্ধান্ত নেয়।’

একাধিক দিনে ভোট জটিলতা তৈরি করবে

একাধিক দিনে ভোট নেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে সরাসরি নাকচ করে দেন মো. আলমগীর। তার শঙ্কা, এতে জটিলতা তৈরি হবে।

তিনি বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আমাদের দেশে একাধিক দিনে নির্বাচন করার ব্যবস্থা আছে। তবে আমাদের এখানে একাধিক দিনে নির্বাচন হয় না। কারণ, এটা তো ছোট দেশ।

তিনি বলেন, ‘ভারতে তো একদিনে সম্ভব নয়। আমাদের এখানে তো সম্ভব। বরং একাধিক দিনে করলে আরও নানারকম জটিলতা দেখা দেবে। একটা সুবিধা করার জন্য আরও দশটা অসুবিধা যদি তৈরি হয়, সেই পন্থা অবলম্বন করা ঠিক হবে না।’

চার মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গ

নির্বাচনের সময় স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, জন প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের হাতে রাখা হবে কি না, এমন প্রশ্নেও নেতিবাচক জবাব দেন আলমগীর। বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সেবা, কাজ ভিন্ন। ইসির অধীনে আনলে জনগণকে কষ্ট দেয়া ছাড়া তো কিছু হবে না। তবে নির্বাচনের সময় যে সহযোগিতা দরকার, সেটা নেব। তারা সেটা দিতে বাধ্য।

‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্যাংক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, তারা তো প্রেষণে নিয়োগ হয়। এটা অলরেডি আইনে আছে। কাজেই ইসির অধীনে মন্ত্রণালয় আনার প্রয়োজন নেই।’

জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) পাশপাশি নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, ‘অতীতে নির্বাচন করে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, এছাড়া প্রশিক্ষণ রয়েছে, এতে আমরা কতজনকে প্রস্তুত করতে পারব, তার উপর নির্ভর করবে রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিজস্ব কর্মকর্তা কতজনকে নিয়োগ করা হবে।

‘এক্ষেত্রে এক জেলায় ডিসি অন্য জেলায় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বা সিনিয়র জেলা কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হতে পারে। আবার একজেলার তিনটি আসনে ডিসি, দুটিতে আমাদের কর্মকর্তা- এভাবেও হতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর