বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উত্তর দেব না, যা খুশি লেখেন, জামায়াতের জোটত্যাগ নিয়ে ফখরুল

  •    
  • ২৯ আগস্ট, ২০২২ ১৬:৪৬

‘আপনারা বলতে পারেন, জিজ্ঞাসা করতে পারেন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি উত্তর দেব না। জিজ্ঞাসা করাটা আপনাদের যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, ঠিক তেমনি উত্তর না দেয়াটাও আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। আপনারা গণতান্ত্রিকভাবে যা খুশি বলতে পারেন, লিখে দেন নো প্রবলেম।’

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়ে কিছুই বলতে চান না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, এ বিষয়ে জবাব না দেয়ার সিদ্ধান্ত তার গণতান্ত্রিক অধিকার।

জামায়াতের কুমিল্লা শাখার একটি রুকন সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নেয়া শফিকুরের বক্তব্য রাজনীতিতে তোলপাড় তোলার পরদিন সোমবার দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ফখরুল। তিনি দলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে ডাকা এই আয়োজনে সাংবাদিকরা তার কাছে জামায়াতের জোট ত্যাগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন রাখেন।

তবে জবাব আসেনি।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনারা বলতে পারেন, জিজ্ঞাসা করতে পারেন। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি উত্তর দেব না। জিজ্ঞাসা করাটা আপনাদের যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, ঠিক তেমনি উত্তর না দেয়াটাও আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। আপনারা গণতান্ত্রিকভাবে যা খুশি বলতে পারেন, লিখে দেন নো প্রবলেম।’

১৯৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া জামায়াতের সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরেই ভালো ছিল না। ২০২১ সালের শুরুতে বিএনপি এই জোট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়েছিল।

এর মধ্যে গত শনিবার কুমিল্লার রুকনদের উদ্দেশে ভার্চুয়ালি এই বক্তব্যে শফিকুর জানান, বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত দলটির সঙ্গে আলোচনা করেই নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও সিদ্ধান্ত হয় যে জোটে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে তাদের দল।

জোট ভাঙার দায় স্পষ্টতই বিএনপির ঘাড়ে চাপান জামায়াত আমির। তিনি বলেন, ‘এই জোটের সঙ্গে বিভিন্ন দল যারা আছে, বিশেষ করে প্রধান দল এই জোটকে কার্যকর করার তাদের চিন্তা নাই। তাদের যদি চিন্তা না থাকে, তাহলে তা হবে না।

‘এই বিষয়টা এখন আমাদের কাছে স্পষ্ট, দিবালোকের মতো পরিষ্কার এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে এটা স্বীকার করেছে। …বছরের পর বছর এই ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না।’

কুমিল্লার রুকন সম্মেলনে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বিএনপির সঙ্গে জোটে না থাকার পেছনে তিনটি কারণের কথা তুলে ধরেছেন

জোট কার্যকর নিয়ে বিএনপির উদ্যোগের অভাব ছাড়াও ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বৈঠাধারী আওয়ামী লীগ-নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দলের নেতাকর্মীদের প্রাণহানির দিন সে সময় সরকারে থাকা বিএনপির কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতা না পাওয়ার কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা বহু চিন্তা করে দেখেছি, এর পর থেকে এই জোট বাংলাদেশের জন্য আর উপকারী জোট নয়।’

সেই সঙ্গে বিএনপি শরিয়া আইনে বিশ্বাসী নয় বলে মির্জা ফখরুল ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি নিয়ে নাখোশ হওয়ার কথাও বলেন জামায়াত নেতা। তিনি বলেন, ‘(জোটের) প্রধান দলের নেতা তো বলেই ফেলেছেন, আমরা শরিয়া আইন সমর্থন করি না।’

জামায়াতের জোট ত্যাগের এই সিদ্ধান্ত গত দুই যুগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় ঘটনা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এই জোটবদ্ধ রাজনীতি ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে নানা ঘটনা তৈরি করে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৯৯ সালে জোটবদ্ধ হয় জামায়াত ও বিএনপি। সঙ্গে ছিল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং আজিজুল হকের ইসলামী ঐক্যজোট।

প্রথমে এরশাদ ও পরে আজিজুল হক জোট ছেড়ে দেন। তবে সমালোচনার মধ্যেও জামায়াতকে বিএনপি কখনও ছাড়তে রাজি হয়নি।

দুই বছর পর যে জাতীয় নির্বাচন হয়, তাতে এই জোটের ভূমিধস জয়ের পেছনে দুই দলের ভোট যোগ হওয়াই ছিল প্রধান কারণ।

তবে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আবার জামায়াত সঙ্গ বিএনপির জন্য নেতিবাচক হিসেবেই ধরা দেয়। ওই নির্বাচনের আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি বড় হয়ে ওঠার পর বিএনপি-জামায়াত জোটের ভরাডুবি হয়। স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকে সঙ্গী করে ভোটে নেমে দীর্ঘদিনের শক্তিশালী অবস্থানেও বড় ব্যবধানে হেরে যায় বিএনপি।

১৯৯৯ সালে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট নিয়ে গঠিত হয় চারদলীয় জোট। পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেই জোট ছেড়ে চলে গেলেও দলের একাংশ থেকে যায়

ওই নির্বাচনের পর বিএনপির পক্ষ থেকে ১০টি কমিটি গঠন করা হয় বিপর্যয়ের কারণ পর্যালোচনার জন্য। এর মধ্যে ৯টি কমিটিই জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতাকে দায়ী করে, যা ছিল বিএনপির তৃণমূল নেতাদের অভিমত।

নির্বাচনের পর বিএনপির তরুণ নেতারাও প্রকাশ্যেই দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দাবি তোলেন।

তবে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে এবং নির্বাচনের পর সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে জামায়াতকে নিয়েই যোগ দেয় বিএনপি। আর ব্যাপক সহিংসতার পর বিএনপি নেতারা নানাভাবে জামায়াতকে দায় দেন।

ওই নির্বাচনের পর একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট কৌশলগত। সময় এলেই তিনি জামায়াতকে ত্যাগ করবেন।

এসব ঘটনায় আবার জামায়াত মনঃক্ষুণ্ন হয় বিএনপির প্রতি। যদিও তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য আসেনি।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতাদের বিচারের সময় বিএনপির কাছ থেকে প্রত্যাশিত সহযোগিতাও পায়নি জামায়াত। এ নিয়েও খেদ আছে দলের নেতাদের মধ্যে।

বিএনপি চারদলীয় জোট সম্প্রসারণ করে পরে ২০-দলীয় জোট গড়েছে। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরও একটি জোট তারা করে গত সংসদ নির্বাচনের আগে।

এর মধ্যে বিএনপির জামায়াত ছাড়ার প্রসঙ্গ নানা সময়ই এসেছে। দশম সংসদ নির্বাচনের পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, সময় এলে তারা জামায়াতকে ছেড়ে দেবেন।

জামায়াতের জোট ছাড়ার বিষয়ে শফিকুরের বক্তব্য আসার দিন মির্জা ফখরুল গণমাধ্যমকে কিছু বলতে রাজি হননি। নিউজবাংলা যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা সময়মতো জানাব। এ ব্যাপারে আমি কোনো কমেন্ট করব না।’

বিএনপির কর্মসূচি বাড়ল

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল জানান, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচি ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি গত ২২ আগস্ট থেকে চলমান রয়েছে, এই কর্মসূচির সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। কর্মসূচিতে আমরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। যেসব জেলা উপজেলা ইউনিয়ন মহল্লায় কর্মসূচি পালন করা সম্ভব হয়নি, সেসব স্থানে চলমান কর্মসূচি আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।’

চলমান কর্মসূচির প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কর্মসূচিতে জনগণের সম্পৃক্ততা দেখে আওয়ামী লীগ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের চরিত্র যে সন্ত্রাসী চরিত্র সেটা আরও একবার উদ্ভাসিত হয়েছে।

‘আওয়ামী লীগের রক্তেই সন্ত্রাস আছে। দলটি রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে। বল প্রয়োগ ছাড়া তাদের টিকে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই।’

ক্ষমতাসীন দল দমননীতির আশ্রয় নিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, 'কিছুদিন আগে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বললেন, কাউকেই গ্রেপ্তার করা হবে না। সভা সমাবেশ সবকিছু করতে দেয়া হবে। কিন্তু তার উল্টো রূপ দেখা যাচ্ছে। এটাই আওয়ামী লীগের চরিত্র। তারা কথা বলবে একটা, কাজ করবে আরেকটা। এভাবেই তারা দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে এবং দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।'

এ বিভাগের আরো খবর