হর্ন নিষিদ্ধ সড়কে আইন ভাঙার দায়ে ১৬টি গাড়িকে জরিমানা করা হলেও একই অপরাধে সরকারি গাড়ি ছেড়ে দেয়া নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে পরে জরিমানা করা হয় এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িকে।
সেই গাড়ির হর্ন আবার বাজে সরকারের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে উচ্চ শব্দে। এ ক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যেই তদারকির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িকে জরিমানা করা হয়, তা কার গাড়ি, সেটিও প্রকাশ করা হয়নি। সেই কর্মকর্তা গাড়িতে ছিলেন না। গাড়িচালককে পরিশোধ করতে হয়েছে জরিমানা। যদিও সেই ম্যাজিস্ট্রেট ফোন করে জরিমানা না করার অনুরোধ করেছিলেন।
গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত থাকার সময় সেটি না করলেও যে জরিমানা করা হয়, সেটি ছিল তুলনামূলক কম।
সোমবার শব্দদূষণমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষিত সচিবালয় লাগোয়া আবদুল গণি রোডে এই অভিযান চালানো হয়। বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই অভিযান চললেও পাশেই পল্টন এলাকায় দিনভর উচ্চ শব্দে হর্নে পথচারীরা অতিষ্ঠ হলেও সেখানে যায়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের দল।
অভিযানে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরিন হক। তিনি বলেন, ‘যেহেতু সচিবালয় এলাকায় হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ, তাই হর্ন বাজালেই আমরা জরিমানা করছি।’
তিনি কথা বলার সময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সে সময় একজন সাংবাদিক বলেন, ‘এখানে অনেক সরকারি গাড়ি আছে যারা হর্ন বাজাচ্ছে। তাদের কেন জরিমানা করা হচ্ছে না।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তখন চুপ থাকেন।
কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে একটি প্রাইভেট কার আসে। তাতে ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট’ লেখা স্টিকার ছিল। গাড়িটি হর্ন বাজিয়ে আসছিল।
সচিবালয় লাগোয়া সড়কে হর্নবিরোধী অভিযানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের মুখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট স্টিকার সাঁটানো একটি গাড়িকে থামানো হয়। ছবি: নিউজবাংলা
কিন্তু চালক দায় অস্বীকার করার পর হর্নের মাত্রা মেপে দেখা গেল, সেটির অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি।
অভিযানে থাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) রিয়াজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাইভেট কারের যেখানে ১০০ পর্যন্ত রাখা যায়, কিন্তু ওনারটা ছিল ১১৫।’
সে সময় গাড়ির চালক সেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ফোন করে ধরিয়ে দেন রিয়াজুল ইসলামকে। তিনি ফোনে সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেন, ‘এখানে মোবাইল কোর্ট চলছে স্যার। পরে ওই গাড়িকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়।’
তবে সেই ম্যাজিস্ট্রেটের নাম জানাননি রিয়াজুল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তার ড্রাইভার ফোন করেন। তখন তিনি আমাকে তার গাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। মোবাইল কোর্ট চলছে বলায় তিনি কিন্তু কিছু বলেননি।’
আপনারা শুরুর দিকে অনেক সরকারি গাড়িকে ছাড় দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কী বলবেন- এমন প্রশ্নে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন কোনো কিছু করা হয়নি।’
এই অভিযানে ১৬টি গাড়িকে মোট চার হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে আছে চারটি প্রাইভেট কার, তিনটি সিএনজি অটোরিকশা আর নয়টি মোটরসাইকেল।
এই হিসাবে একটি গাড়ির গড় জরিমানা ২৭৫। এই হিসাবেও সেই ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িকে জরিমানা করা হয়েছে কম।