জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিচার এখনও হয়নি জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের স্বরূপ সামনে নিয়ে আসতে হবে। সেটা সামনে আনা না গেলে এখনও মোশতাক, জিয়া, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমরা যে ফিরে আসবেন না এই গ্যারান্টি কিন্তু আমরা কেউ দিতে পারি না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) আয়োজিত ‘রক্তাক্ত আগস্ট ও মায়ের কান্না’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সোমবার তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিচার এখনও হয়নি। তাই যাদের বিচার হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে এখনও অভিযোগপত্র হতে পারে বলে মনে করেন মন্ত্রী রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের যারা কুশীলব, তাদের সবার বিচার হয়নি। এই ঘটনায় যারা বেনিফিশিয়ারি তাদের বিচার হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে প্রটেকশন দেয়ার জন্য সিভিল এবং ল ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সির যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তারা কি ব্যর্থ হয়েছেন নাকি নিজেদের কচ্ছপের মতো গুটিয়ে রেখেছিলেন, তাদেরও বিচার করা হয়নি। তাই বলতে চাই, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে অসম্পূর্ণ। পূর্ণাঙ্গ বিচার হয়নি।’
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩-এর সাব সেকশন টু এর স্মল বি অনুসারে, এখনো চার্জশিট হতে পারে। যারা মারা গেছে, তাদের বিচার হবে না, তবে ততটুকু দেখা যেতে পারে, তিনি জড়িত এই তথ্য পাওয়া গেছে। যেহেতু তিনি মারা গেছেন, তাই তার বিচার করা গেল না।’
প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের স্বরূপ সামনে নিয়ে আসা না গেলে এখনও যে মোস্তাক জন্মাবে না, আবার যে জিয়া জন্মাবে না, আবারও যে জুডিশিয়ারি ইতিহাসের কলঙ্ক রচনাকারী আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমরা আসবেন না এই গ্যারান্টি কিন্তু আমরা কেউ দিতে পারি না। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরে এসেছেন বলে সাহস নিয়ে বিচার করেছেন। অন্যথায় এই বিচার হতো না।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন অফিসার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ মোশতাক আহমেদসহ অন্যরাও জড়িত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ তিন দশকেও সে হত্যাকাণ্ডের বিচার আলোর মুখ দেখেনি। অবশেষে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত পাঁচজনের ফাঁসি হয়। অন্য আসামিরা এখনও দণ্ড মাথায় নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছে।
আলোচনায় আপিল বিভাগের (অবসরপ্রাপ্ত) বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আসামিদের বর্ণনা ও সাক্ষী অনুযায়ী যারা নাটের গুরু, তাদের বিচার হয়নি। এই মামলার নাটের গুরু ছিলেন জিয়া। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে জিয়া কোনো দিনই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। জিয়া ছিলেন পাকিস্তানের চর। একাত্তরের পর থেকেই জিয়ার লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা।’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক স্বদেশ রায়, বীরপ্রতীক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সাংসদ নবী নেওয়াজ খাঁন, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের (বোয়াফ) সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় প্রমুখ।