ধর্ষণ মামলার আলামত ধ্বংসের অভিযোগে বগুড়ার ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে বদলির আদেশ হয়েছে।
রোববার রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে ধুনট থানার ওসিকে পাবনা জেলায় বদলি করা হলো।
ওসির বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো তদন্ত করা হচ্ছে।’
এর আগে গত ২ আগস্ট ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করেন উপজেলার এক স্কুলছাত্রীর মা। তিনি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর কাছে লিখিতভাবে ওই অভিযোগ দেন। পরে এই মামলাটি গত ১৮ আগস্ট জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এর আগে ওসির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। গত ৩ আগস্ট জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদকে প্রধান করে মোট তিন সদস্যের ওই কমিটি গঠন করেন এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।
তবে অভিযোগের ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও তদন্ত শেষ হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র। এ ছাড়া ডিবি পুলিশের কাছে ধর্ষণ মামলার তদন্ত যাওয়ায় সন্তুষ্ট নন ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা। রোববার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে মামলাটির তদন্তভার দেয়ার দাবি জানান তিনি।
মামলার বাদী বলেন, ‘আমি ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করেছি। এরপরও ওসি ধুনট থানায় দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। ওসি অনেকের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন যে, এসব অভিযোগে তার কিছু হবে না।’
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগের তদন্ত আমি দেখছি। এর কাজ প্রায় শেষদিকে। সিআইডি থেকে ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।’
লিখিত অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকে অভিযোগকারীর বাড়িতে ভাড়া থাকছিলেন প্রভাষক মুরাদুজ্জামান। এ অবস্থায় বাড়িওয়ালার ১৬ বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কিছু ছবি তোলেন তিনি। পরে গত ৩ মার্চ বেলা ১১টার দিকে মেয়েটিকে নিজ ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
শুধু তাই নয়, ধর্ষণের কিছু আপত্তিকর দৃশ্যও মুঠোফোনে ধারণ করেন ওই প্রভাষক। পরে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মেয়েটির সঙ্গে একাধিকবার ঘনিষ্ঠ হন তিনি।
সবশেষ চলতি বছরের গত ১২ এপ্রিল সকালে ভাড়া বাসায় মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন মুরাদুজ্জামান। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে স্বজনরা এগিয়ে এলে কৌশলে পালিয়ে যান প্রভাষক। পরে আর তিনি ওই বাসায় ফেরেননি।
তবে ওই ঘটনার পরপরই মুরাদুজ্জামানের পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দেয় মেয়েটির পরিবার। এ ছাড়া গত ১২ মে সকালে ধুনট থানায় মুরাদুজ্জমানের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। মামলার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ছাড়া মুরাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর গত ২৪ মে ধুনটের জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা কমিটি তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে। আদালতের রায়ে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ পরিচালনা কমিটি।