বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে সাগরে ভাসমান অবস্থায় ভারতে উদ্ধার হওয়া এক জেলের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার সকালে ভারতের কাকদ্বীপ এলাকার তাকদির স্পেশালাইজড হাসপাতালে ওই জেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুম আকন রোববার সকালে নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
৪৭ বছরের জেলে ইউনুস গাজী পটুয়াখালীর মহিপুর থানার বিপিনপুর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
তার মরদেহ ফিরে পেতে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।
ইউনুস গাজীর মেয়ে চম্পা জানান, মহিপুর থানার বাবুল কোম্পানির মালিকানাধীন এফবি জান্নাত ট্রলারে রহমাতুল্লাহ মাঝির নেতৃত্বে ১৫ আগস্ট বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করতে যান তার বাবা। পরে ১৮ আগস্ট ট্রলারটি ঝড়ের কবলে পড়ে এবং ১৯ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে ট্রলারটি ডুবে যায়। এরপর থেকে তার বাবা ইউনুস গাজী নিখোঁজ হন। বাকি ১৪ মাঝিমাল্লা বাড়িতে ফিরলেও আট দিন কোনো খোঁজ মেলেনি তার বাবার।
ট্রলারডুবির চার দিন পর ভাসমান অবস্থায় বঙ্গোপসাগর থেকে তার বাবাকে ভারতীয় জেলেরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। সেখান থেকে গত বুধবার ভারতের এক নারী চিকিৎসক তার বাবার খোঁজ দেন।
পরে সন্ধ্যায় বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন চম্পা ও তার স্বজনরা।
ভারতের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে চম্পা জানান, তাঁর বাবা চার দিন সাগরে ভেসে থাকায় শরীরের চামড়া খসে গেছে। দুই দিন আইসিইউতে ভর্তি থাকার পর শুক্রবার সকাল ৯টায় মারা গেছেন।
ইউনুস গাজীর স্ত্রী ফাতিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী সাগরে বাঁচার জন্য অনেক যুদ্ধ করছে। তার পরও বাঁচাতে পারে নাই। আমি একটু শেষবারের মতো আমার স্বামীরে দেখতে চাই। আমার বাড়ির সামনে কবর দিতে চাই।’
৬ নম্বর মহিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাজী মোহাম্মদ ফজলু গাজী জানান, ইউনুস গাজীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভারতে পাঠানো হয়েছে। ইউনুস গাজীই তাঁর পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিলেন। ছোট ছোট পাঁচটি সন্তান রয়েছে তার। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে তাদের পথে বসতে হবে।
এদিকে ঝড়ের কবলে ভারতে ভেসে যাওয়া জেলেদের উদ্ধার করতে যাওয়া বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, ‘কাকদ্বীপে ৪৬ জেলে, রায়দিঘি থানায় ১১ এবং কোস্টাল পুলিশ স্টেশনে ১৭ জন বাংলাদেশি জেলে রয়েছেন। তাদের মধ্যে কাকদ্বীপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইউনুস গাজী মারা গেছেন। এরই মধ্যে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চাইছি বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনতে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা চাইছি।’