কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দামুকদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আগামী সাত দিনের মধ্যে ওই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম।
প্রধান শিক্ষক আরও জানান, স্কুল রোববার খুলবে। এ অবস্থায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়- সে জন্য শিক্ষার্থী ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই শিক্ষক বলেছেন, ‘আমাকে আপাতত স্কুলে না যেতে বলা হয়েছে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যারা আমার এবং স্কুলের ক্ষতি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া উচিত।’
‘শিক্ষার্থীদের দেয়া সালাম না নিয়ে কটূক্তি করেছেন’- শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার এমন অভিযোগ তুলে গত বুধবার কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতরা। পরে পুলিশ গিয়ে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে। এ নিয়ে স্কুল এলাকায় উত্তেজনা চলছিল।
এ অবস্থায় স্কুল পরিচালনা কমিটি শনিবার বিকেল ৫টায় প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসে। কমিটির সভাপতি আমজাদ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জন অংশ নেন।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম জানান, আলোচনা শেষে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক শরীফুল ইসলামকে। অন্য সদস্যরা হলেন বিদ্যুৎসাহী সদস্য ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ওহিদুল ইসলাম, অভিভাবক সদস্য মো. কামরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও শিক্ষক প্রতিনিধি মো. বশিরুল ইসলাম।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘বৈঠকের সিদ্ধান্তে ওই তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ওই শিক্ষককে শোকজ করা হবে কি না বা কী করা হবে- সেই সিদ্ধান্ত হবে।’
এ বিষয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই শিক্ষক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যা করিনি, তা নিয়ে তদন্তে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
এ সময় তিনি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে যারা এ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।
পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসায় আতঙ্ক কিছুটা কেটেছে জানিয়ে ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমি হাইপো থাইরয়েড রোগী। টেনশন না করতে বলেছেন চিকিৎসক। আজ সারা দিনও খুব অসুস্থ ছিলাম।’
এদিকে এই ঘটনা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনা কমাতেই কাজ করছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও জাসদ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেছি যাতে আর কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি না হয়। এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। সকালে কথা বলেছি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা আন্দোলনের জন্য মামলা হবে না এমন শর্তে আর উত্তেজনা সৃষ্টি করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
‘ছাত্রদেরও শর্ত দেয়া হয়েছে স্কুলের পরিবেশ ঠিক রাখা এবং নিয়মিত ক্লাস করার ও বহিরাগত প্রবেশের বিষয়ে সতর্ক থাকার।’