স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার আগে কিছু প্রশ্ন পাঠিয়েছিলেন। ৭৬ জন গুম ও অন্যান্য বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেখিয়েছে। এটি দেখার পর ব্যাচেলেট আর কোনো প্রশ্ন করেননি।
শনিবার দুপুরে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ইনার হুইল ক্লাব আয়োজিত ‘পঞ্চম দক্ষিণ এশিয়া সম্মেলন’ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সফর নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশে আসছিলেন। তিনি জাতিসংঘের অ্যাম্বাসেডর। তিনি আমাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেছেন। আমাদের তিনি কয়েকটি প্রশ্ন দিয়েছেন, তিনি যেগুলো নিয়ে আলাপ করবেন।
‘তিনি শুধু আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় না, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সাথে তিনি দেখা করেছেন, কথা বলেছেন, মতবিনিময় করেছেন। আমাদের এখানে যখন এসেছে, আমরা ৭৬ জন গুম এবং অন্যান্য যে বিষয়গুলো ছিল, সেগুলো নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশনে দেখিয়েছিলাম। কোন দিন, কোথায়, কে কীভাবে আছে—সবগুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত বোঝালাম। তিনি সেদিন আমাদেরকে কোনো প্রশ্ন করেননি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি আরও অনেক সংস্থার সঙ্গে এবং বিরোধী দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা তাকে আরও একটি পরিসংখ্যান দেখিয়েছিলাম: ২০০৫-এ বিএনপির ক্ষমতার শেষ বছরে কতজন নিখোঁজ হয়ে গেছে। এটা ইউএস ডিপার্টমেন্টের একটা নথি। সেটাই আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম। সেই সংখ্যাটা ৪১১ প্লাস, নিখোঁজ।
‘তিনি সমস্ত কিছু বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষ একজন নেতা। তার দেশে তিনি দুইবারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন। তার দক্ষতা, তার বিজ্ঞতা, তার দূরদর্শিতা অনেক অনেক ওপরে। কাজেই তিনি আমাদের সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে সকল ইনফরমেশন পেয়েছেন, সেগুলো বিশ্লেষণ করে তিনি তার মতামত দিয়েছেন, যেটা আপনারা শুনছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি তার বিজ্ঞতা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশে আমাদের সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে না; বরং যত্ন সহকারে, সচেতনতা সহকারে দেশ চালাচ্ছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সেটাই তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন।’
গুম-খুন নিয়ে বিরোধী দলের অবস্থান প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবসময় বলে আসছি, তারা একটি অবস্থার সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্নভাবে এসব রটনা করে যাচ্ছে। এগুলোর কোনো ভিত্তি নাই। এগুলোর কোনো সত্যতা তারা দেখাতে পারেনি।
‘আপনারা দেখেছেন, হেফাজতের আন্দোলনের সময় অধিকার নামে একটি এনজিও বলেছিল, পুলিশের গুলিতে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। আমরা তখন তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। আপনি নাম-ঠিকানাসহ আমাদের দেন। তারা দিতে পারেনি। এগুলো সব জানেন। এগুলো সব যদি তথ্যভিত্তিক না হয়, বাস্তবসম্মত না হয়, এগুলোর যে ভিত্তি নেই, সেটাই বোধ হয় মিশেল ব্যাচেলেট উপলব্ধি করেছেন।’
জাতিসংঘ মানবাধিকার নিয়ে কিছু না বলায় যুক্তরাষ্ট্রের বিধিনিষেধ আরোপ ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয় কি না, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি শুধু জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধানের উক্তিটাই করলাম। অনেকে অনেক কথা বলে, আপনারা জানেন। আমি সব সময় বলে থাকি, তথ্য ছাড়া, প্রমাণ ছাড়া কিছু বললে সেটা জনগণ বিশ্বাস করে না। জনগণ সেগুলো আস্থায়ও নেয় না।’