তিনি সাম্যের ফেরিওয়ালা। ধর্ম-বর্ণ, স্থান-কালের ভেদাভেদ ভুলে যিনি মানুষের জয়গান গেয়েছেন আমৃত্যু। যার গান, কবিতা আর গল্পের পরতে পরতে রয়েছে প্রেম, বিদ্রোহ আর সাম্যের কথা। তিনি কবি নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আজ তার পরলোকগমনের দিন।
মৃত্যুর আগে যা দিয়ে গেছেন, তা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদে পরিণত হয়েছে।কাজী নজরুল ইসলামকে অনেকে বলেন বাংলার সাহিত্যাকাশের ধুমকেতু।১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট মারা গেলেও কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন ১৯৪২ সাল থেকেই। তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। একই বছরের শেষের দিকে মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন কবি। সে হিসাবে ৪০-এরও কম বছরে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার যাবতীয় সাহিত্যকর্ম।সেখানে আছে গান, কবিতা। গল্পে বলে গেছেন প্রেম, বিদ্রোহ আর সাম্যের কথা। সবখানেই নজরুল অতুলনীয়।
যে হাতে তিনি লিখেছেন- ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেব খোঁপায় তারার ফুল/কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির, চৈতী চাঁদের দুল/জ্যোছনার সাথে চন্দন দিয়ে মাখাব তোমার গায়/রামধনু হতে লাল রং ছানি, আলতা পরাব পায়,’ সেই হাতেই লেখা হয়েছে- ‘মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত/যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না/বিদ্রোহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত।’
আবার সাম্যের কথা বলতে গিয়ে লিখেছেন, ‘গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান/গাহি সাম্যের গান!/কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?/কন্ফুসিয়াস্? চার্বআখ চেলা? বলে যাও, বলো আরো! বন্ধু, যা-খুশি হও…’
নজরুলের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১৯৭৬ সালে নজরুলকে দেয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব।
২৭ আগস্ট তার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) ঢাকায় পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই/ যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই।’
১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র ১৩৮৩) কবির ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে দাফন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে।
শনিবার সকাল পৌনে ৭টায় কবির সমাধিতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা জানাবেন প্রতিমন্ত্রী এ কে খালিদ।
এ ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কবিকে শ্রদ্ধা জানানো হবে।