বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু নিয়ে রহস্য বাড়ছেই

  •    
  • ২৬ আগস্ট, ২০২২ ২৩:১৪

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, শিক্ষক দম্পতিকে বহন করা প্রাইভেট কারটি ঘটনাস্থলের কাছে কিছুটা পথ একটু ডানে-বাঁয়ে এঁকেবেঁকে গিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যায়।

৮ দিন পেরিয়ে গেলেও গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রহস্য উদঘাটনে পুলিশ, পিবিআই, র‍্যাব, সিআইডিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো সংস্থাই মৃত্যুর কারণ উদঘাটন এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

শুরুতে ওই দম্পতির মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিষক্রিয়াকে দায়ী করা হলেও এখন বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বিচার বিশ্লেষন করা হচ্ছে। এর মধ্যে স্কুলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, আয়-ব্যয়ের হিসাব ছাড়াও ফেসবুকে একটি রহস্যজনক পোস্টও সন্দেহের আওতায় এসেছে।

এ ছাড়া গাড়ির এসি থেকে বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণসহ নানা দিক নিয়ে তদন্ত করছে আইনশৃংখলা সংস্থাগুলো।

পুলিশ বলছে, রহস্য উদঘাটনে তারা অপেক্ষা করছেন ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টের জন্য। এ ছাড়া গত ৮ দিনে বেশ কয়েকজনকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

স্কুল থেকে নিজেদের প্রাইভেটকারে বাসায় ফেরার পথে পথে গত ১৭ আগষ্ট সন্ধ্যার পর নিখোঁজ হন টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জিয়াউর রহমান মামুন ও তার স্ত্রী টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা. মাহমুদা আক্তার জলি। পরদিন বৃহস্পতিবার ভোরে গাছা থানাধীন বগারটেক এলাকায় প্রাইভেটকারের ভেতর তাদেরকে অচেতন অবস্থায় পান পরিবারের সদস্যরা।

হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক শিক্ষক দম্পতিকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর পুলিশ শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে। নিহতের পরিবারের স্বজনদের দাবি ওই শিক্ষক দম্পতিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

ফেসবুকে পোস্টদাতাকে খুঁজছে পুলিশ

বর্তমানে একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে সন্দেহ দানা বেঁধেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে। ওই পোস্টে শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে গ্রুপিং করছেন এমন দাবি করা হয়।

যেদিন ভোরে শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়, সেদিন বিকেলেই ‘শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষকদের উদ্দেশে আক্রমণাত্মক ওই পোস্টটি করেন চৌধুরী জাকারিয়া নামের এক ব্যক্তি।

স্কুলে শিক্ষকদের গ্রুপিংয়ের জেরেই ওই পোস্ট বলে মনে করছে তদন্ত সংস্থাগুলো। তবে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর সঙ্গে পোস্টটির কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে চৌধুরী জাকারিয়ার ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকতে চাইলে সেটি ‘লক’ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ২৫-২৬ বছর বয়সী চৌধুরী জাকারিয়ার প্রোফাইলে দেয়া ছবি দেখে স্থানীয়দের কেউ তাকে চিনতে পারেননি।

এ বিষয়ে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নূরুজ্জামান রানা বলেন, ‘ইংরেজিতে ‘শহীদ স্মৃতি হাই স্কুল, টঙ্গী’ নামের স্কুলের একটি ফেসবুক পেজ আছে। এর বাইরে আর কোনো ফেসবুক নেই। ওই ব্যক্তিকে আমি কখনো দেখিনি। নামও শুনিনি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উচিত তাঁকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান মতিও চৌধুরি জাকারিয়াকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার বলে মনে করছেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (অপরাধ) হাসিবুল আলম জানান, চৌধুরী জাকারিয়ার ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

স্কুলের দ্বন্দ্ব ও সিসি ক্যামেরায় যা দেখা গেল

শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মতিউর রহমান মতি দাবি করেছেন, তিনি ১৩ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পদে আছেন। শিক্ষকদের মাঝে কোনো বিরোধ তার জানা নেই। পরিচালনা পরিষদের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের সম্পর্কও ভালো ছিল।

এদিকে মামলার বাদী নিহত প্রধান শিক্ষকের ভাই আতিকুর রহমান জানান, তার ভাইয়ের নিহত স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলি নিজের স্কুল ছুটির পর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। সেখানে প্রধান শিক্ষক স্বামীসহ অন্য শিক্ষকদের কয়েকজন স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলমের হোটেল থেকে জিলাপি আনিয়ে খান। এ সময় মাহমুদা আক্তার জলি স্কুলে চা পান করেন। পরে তারা বাড়ির উদ্দেশে স্কুল ত্যাগ করেন। স্কুল ত্যাগ করে বগারটেক আসার পথে প্রায় ২৭ মিনিট সময় লেগেছে।

এ অবস্থায় ওই দম্পতি স্কুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে মরদেহ উদ্ধারের স্থান পর্যন্ত সড়কের পাশের বিভিন্ন স্থাপনায় লাগানো সব কয়টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সন্দেহজনক কিছু মেলেনি বলে দাবি পুলিশের।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই দম্পতি স্কুল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর লাশ উদ্ধারের স্থান পর্যন্ত পুরো সময়ের সিসি ফুটেজ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু ওই ফুটেজের কোথাও বাইরে থেকে কেউ গাড়িতে ঢুকতে দেখা যায়নি।’

এ অবস্থায় পুলিশ দুটি বিষয় সামনে রেখে কাজ করছে। একটি হলো যদি এটি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে তাদের খাদ্যের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল। আরেকটি হলো- গাড়ির এসির গ্যাস নিঃসরণের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। উভয় কারণ যাচাই করতে কিছু আলামত ও নমুনা সংগ্রহ করে ইতোমধ্যে ঢাকায় একাধিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ মতামত পাওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন জানান, সিসি ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তারা স্কুল থেকে বের হয়ে একটি পেট্রল পাম্পে গাড়ির জ্বালানি নেন। পরে কামরুজ্জামান নামের এক সহকর্মীকে একটি স্থানে নামিয়ে দেন। সেখানে একটি দোকান থেকে তারা পান কিনেন। পরে গাড়িটি টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ উড়াল সড়কের নিচে কিছু সময় যানজটে আটকে থাকে। সেখান থেকে বগারটেক পৌঁছাতে তাদের সময় লাগে ২৭ মিনিটের মতো।

এই সময়ের মধ্যে ওই গাড়ি থেকে আর কাউকে নেমে যেতে অথবা ওই গাড়িতে আর কাউকে উঠতে দেখা যায়নি। প্রাইভেট কারটি ঘটনাস্থলের কাছে কিছুটা পথ একটু ডানে-বাঁয়ে এঁকেবেঁকে গিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যায়। এরপরও গাড়িটি চালু ছিল। পরে এর জ্বালানি শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে যায়।

অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ড ধরে তদন্তকাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। কয়েকজনকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।’

জেলা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছায়া তদন্ত করছি। এখনও কিছু নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে রহস্য উদঘাটন সহজ হবে।’

গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে এটি একটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে মনে হচ্ছে। আমরা ছায়া তদন্তে নেমে অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবুও আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ময়নাতদন্ত ও বিভিন্ন নমুনার রিপোর্টের জন্য।’

এ বিভাগের আরো খবর