কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব তালুকদারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। বলেছেন, একজন লেখক হিসেবে মাহবুব তালুকদার বেঁচে থাকবেন।
মৃত্যুর দুই দিন পর শুক্রবার জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে মাহবুবের জানাজা হয়। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়।
জনাজায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, মাহবুব তালুকদারের ছেলে শোভন মাহবুবসহ অনান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজার আগে সিইসি বলেন, ‘আমার কাছে তার পরিচয় একজন লেখক হিসেবে। ইতিহাস নিয়ে বেশ ভালো কিছু লেখা লিখেছেন। উনি লেখক হিসেবেই যেন বেঁচে থাকেন। আপনারা সবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন।’
হুদা কমিশনের নানা সিদ্ধান্তে ভিন্নমত ও নানা নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করে আলোচিত মাহবুব তালুকদার গত ২৪ আগস্ট হার্ট অ্যাটাকের পর মারা যান।
২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করা মাহবুব রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি লেখক ও কবি হিসেবেও তার পরিচয় ছিল।
খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ, কাব্যগ্রন্থ, শিশুসাহিত্য, ছড়ার বই ও ভ্রমণকাহিনি মিলিয়ে মাহবুব তালুকদারের বইয়ের সংখ্যা ৪৮। ২০১২ সালে তিনি লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার।
মাহবুব তালুকদারের রচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো: ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’, ‘আমলার আমলনামা’, ‘বধ্যভূমি’, ‘চার রাজাকার’, ‘সুপ্রভাত আমেরিকা’, ‘কবিতাসমগ্র’, ইত্যাদি।
একাত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভারতে গিয়ে প্রবাসী সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
জানাজা শেষে মাহবুব তালুকদারের ছেলে কানাডাপ্রবাসী শোভন মাহবুব বলেন, ‘আমার বাবা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কথা ও কাজে কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তা হলে তাকে মাফ করে দেবেন। কেউ যদি ওনার কাছে পাওনাদার থাকেন আমাদেরকে জানাবেন।’
জানাজা শেষে বারিধারার বাসায় তার মরদেহ কিছুক্ষণ রেখে বিকেলে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন মাহবুব তালুকদারের বড় মেয়ে আইরিন মাহবুব। মৃত্যুর আগে এটিই তার শেষ ইচ্ছা ছিল বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী মাহবুব তালুকদারকে উপসচিবের পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির স্পেশাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেন করেন। সে সময়ের রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ উল্লাহর জনসংযোগ কর্মকর্তাও ছিলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মাহবুব তালুকদার তার সহকারী প্রেস সচিবের (উপসচিব) দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাকে তদানীন্তন ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা পরে বিসিএস প্রশাসন হিসেবে রূপান্তরিত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর মাহবুব তালুকদারকে ওএসডি করা হয়।
পরে তাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক করা হয়। চাকরিজীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ে অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।