বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি: ৬ দফার বাস্তবায়ন নেই ১৬ বছরেও

  •    
  • ২৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:১১

ট্র্যাজেডির ১৬ বছর পূর্তি হলেও ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো এশিয়া এনার্জি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ অবস্থায় এশিয়া এনার্জির ‘ষড়যন্ত্র’ প্রতিহতের ডাক দিয়েছেন তারা।

ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস আজ। ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে রক্তাক্ত হয় দিনাজপুরের এ জনপদ। সেদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান তিন যুবক। আহত হন অনেকে।

বাস্তবতা হলো ওই ঘটনার১৬ বছর পূর্তিতেও ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো বহুজাতিক কোম্পানি এশিয়া এনার্জি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ অবস্থায় এশিয়া এনার্জির ‘ষড়যন্ত্র’ প্রতিহতের ডাক দিয়েছেন তারা।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি বাস্তবায়নের প্রস্তাবকারী এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ীর অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করতে যায় আন্দোলনকারীরা। সে সময় তাদের মিছিলে টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম, আমিন ও সালেকিন নামে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। একই ঘটনায় আহত হন অনেকে। তাদের মধ্যে বাবলু রায় নামে একজন চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। সেই গুলির ক্ষত বহন করছেন অনেকে।

পরে ফুলবাড়ীবাসীর টানা গণআন্দোলনের মুখে ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের সঙ্গে ৬ দফা শর্তে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। তা ফুলবাড়ী ৬ দফা চুক্তি হিসেবে পরিচিত।

ফুলবাড়ীবাসী ও আন্দোলনকারী সংগঠন তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এরপর থেকে দিনটিকে ‘ফুলবাড়ী দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। একই সঙ্গে ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলন করে আসছে।

এদিকে ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এশিয়া এনার্জির প্রধান গেরি এন লাই সস্ত্রীক তাদের ফকিরপাড়া ওর্য়াকশপ অফিসে মিটিং শেষে ফুলবাড়ী অফিসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বিষয়টি জানতে পেরে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ওই অফিসে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে থাকা গাড়িগুলো ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় ১০ অক্টোবর এশিয়া এনার্জির মাঠ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান আন্দোলকারী সংগঠনের ১৯ নেতার নামে দুটি মামলা করেন, যা দিনাজপুরে আদালতে বিচারাধীন।

ফুলবাড়ীর ৬ দফা চুক্তির ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এশিয়া এনার্জি নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা।

পুলিশের গুলিতে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়া বাবলু রায় বলেন, ‘আমরা ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে দেব না বলেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। সেই আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণে আমি আজ বিছানা থেকে উঠতে পারি না।

‘আমাদের সঙ্গে করা ৬ দফা চুক্তি আজও বাস্তবায়ন হয়নি; বরং তারা নতুন করে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন বাস্তবায়নে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমরা কখনোই তা বাস্তবায়ন হতে দেব না।’

আন্দোলনকারীদের একজন হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি বাস্তবায়ন হলে আমাদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমাদের জীববৈচিত্র্য একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমরা ফুলবাড়ীবাসী এখানে কয়লা খনি চাই না।’

তেল-গ্যাস-খনিজসম্পাদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটি ফুলবাড়ী শাখার সাবেক সদস্য সচিব নুরুজ্জামান বলেন, ‘২০০৬ সালে আমরা বুকের রক্ত দিয়ে এশিয়া এনার্জিকে প্রতিহত করেছি। তারা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

‘প্রয়োজন হলে ২০০৬ সালের মতো আমরা আবারও রক্ত দিয়ে রাজপথে লড়াই করব। ফুলবাড়ীর সম্পদ ফুলবাড়ীবাসীর কাছেই থাকবে। আমাদের সঙ্গে করা ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক মুরতুজা সরকার মানিক বলেন, ‘আমরা অতীতেও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। আগামীতেও চলমান থাকবে। ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করার পরই কেবল সরকার কয়লা উত্তোলন করতে পারবে।

‘তারা আবার নতুন করে গোপনে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা প্রকাশ্যে এলে ফুলবাড়ীবাসী আবারও তাদের প্রতিহত করবে।’

ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন, ‘সরকার ফুলবাড়ীর সম্পদ কয়লা উত্তোলন করতে চাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দাবি মেনে নিয়ে কয়লা উত্তোলন করলে সরকার ও ফুলবাড়ীবাসী উভয় পক্ষেরই উপকার হবে। ফুলবাড়ীবাসীর সব আন্দোলনের সঙ্গে আমি আছি।’

ফুলবাড়ী দিবস পালন উপলক্ষে সকালে শোভাযাত্রা বের হয়। সেটি শহর প্রদক্ষিণ করে ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের কাছে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

সকালে নিমতলা মোড়ে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি করা হয় তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মোহাম্মদকে।

এ বিভাগের আরো খবর