বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাহবুব তালুকদারের শেষ ইচ্ছা পূরণে অনিশ্চয়তা

  •    
  • ২৫ আগস্ট, ২০২২ ১৮:৪৩

আইরিন মাহবুব বলেন, ‘বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে যেন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে। এখন আমি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত রিচ করব?’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদারের শেষ ইচ্ছা পূরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আলোচিত এই সাবেক ইসির শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর তাকে যেন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। কিন্তু সেখানে দাফন করা সম্ভব হবে কীনা বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্তও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্য নিয়ে মেয়ে আইরিন মাহবুব বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। তবে মেয়র তাকে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।

কোথায় দাফন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আইরিন মাহবুব বলেন, ‘বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল তাকে যেন শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে।’

আইরিন বলেন, ‘মেয়র জানিয়েছেন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের অংশে বাবাকে দাফন করা যাবে। বুদ্ধিজীবীদের অংশে দাফন করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া আমি কিছু করতে পারব না।’

‘এখন আমি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত রিচ করব? সিটি করপোরেশন একটু হেল্প করতে পারত। জানাতে পারত যে এ বিষয়ে কোনো দরখাস্ত দিতে হবে কিনা? তাহলে আমার জন্য বিষয়টি সহজ হতো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের একটি অংশ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাফনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। উনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সে হিসেবে ওনাকে সেখানে দাফনের অনুমতি অনুমতি দিয়েছি। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সব সুবিধা তিনি পাবেন।’

ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তিনটি অংশ রয়েছে। একটি অংশ সাধারণ কবরস্থান ও একটি অংশ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের জন্য বরাদ্দ। আরেকটি অংশ বীরশ্রেষ্ঠ ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য বরাদ্দ। এই অংশে দাফনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়।

অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ায় বুধবার দুপুরে মাহবুব তালুকদারকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের কথা জানান চিকিৎসক। দুপুর দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসকরা।

শুক্রবার বাদ জুমা কেন্দ্রীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে তার নামাজে জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগ পর্যন্ত তার মরদেহ বারডেমে হিমঘরে রাখা হয়েছে।

মাহবুব তালুকদার দুই মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। তার এক মেয়ে আইরিন মাহবুব দেশেই থাকেন। অপর দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে শোভন মাহবুব থাকেন কানাডায় এবং মেয়ে আফরীন মাহবুব থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। মরহুমের প্রবাসী এই দুই সন্তান আজ রাতে দেশে ফিরছেন।

মাহবুব তালুকদার ১৯৪২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার নবাবপুর হাইস্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন।

ঢাকার জগন্নাথ কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন মাহবুব তালুকদার। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ও মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরিতে যোগ দেন।

ওই সময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তাকে উপসচিবের পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির স্পেশাল অফিসার নিযুক্ত করেন।

রাষ্ট্রপতি মুহম্মদুল্লাহর সময়ে তিনি তার পাবলিক রিলেশনস্ অফিসার ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর মাহবুব তালুকদার তার সহকারী প্রেস সচিবের (উপসচিব) দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাকে তদানীন্তন ক্যাডার সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা পরবর্তীকালে বিসিএস প্রশাসন হিসেবে রূপান্তর হয়।

মাহবুব তালুকদার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন। চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ে অতিরিক্ত সচিবের পদে ছিলেন।

লেখক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন মাহবুব তালুকদার। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনি মিলিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০।তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। তার স্ত্রীর নাম নীলুফার বেগম। এ দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয়া কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে আলোচিত কমিশনার ছিলেন মাহবুব তালুকদার। ভোট নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেয়া তার বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বিভিন্ন সময়ে সে বক্তব্যের সমালোচনা করেন সিইসি নুরুল হুদা।

কমিশনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আলাদা লিখিত বক্তব্য পড়তেন মাহবুব তালুকদার। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি নুরুল হুদা কমিশনের বিদায়ের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে যান এ কমিশনার।

এ বিভাগের আরো খবর