টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছিলেন জাকিয়া সুলতানা রুপা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের এ ঘটনায় প্রতিবাদ হয় দেশজুড়ে। পরের বছরই আদালতের রায়ে চার আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং একজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
তবে চার বছর পরও আপিল শুনানিতে আটকে আছে রায়। সাজা কার্যকর হওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে রুপার পরিবার।
রুপার বাড়ি সিরাজগঞ্জের তাড়াশে। কাজ করতেন ময়মনসিংহে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তবে লক্ষ্য ছিল শিক্ষকতা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট শুক্রবার বগুড়ায় গিয়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়ে রাতের বাসেই ময়মনসিংহে ফিরছিলেন রুপা। কারণ পরদিন ছিল অফিস।
ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পৌঁছালে নেমে যান অন্য যাত্রীরা। কালিহাতী এলাকায় পৌঁছালে বাসের হেলপার ও অন্য তিন সহযোগী রুপাকে পেছনের সিটে নিয়ে ধর্ষণ করে। মধুপুর পৌঁছালে রুপাকে ঘাড় মটকে হত্যা করা হয়। মধুপুর-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর বনের পঁচিশ মাইল এলাকায় জঙ্গলের মধ্যে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা।
পরদিন সকালে স্থানীয়রা মরদেহ পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ পরিচয় না পাওয়ায় ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হিসাবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম মধুপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
রুপার খোঁজ না পেয়ে তার ভাই হাফিজুর রহমান প্রামাণিক ঘটনার তিন দিন পর মধুপুর থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে রুপাকে শনাক্ত করেন। পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক মো. হাবিবুর, সুপারভাইজার সফর আলী, সহকারী মো. শামীম, মো. আকরাম ও মো. জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। ধর্ষণ ও হত্যার দায় স্বীকার করে তারা আদালতে জবানবন্দিও দেয়।
পরে রুপার লাশ উত্তোলন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সিরাজগঞ্জের তারাশে আসানবাড়িতে পারিবারিকভাবে তাকে দাফন করা হয়।
২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া রুপাকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে বাসের চালক ও হেলপারসহ চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
সুপারভাইজার সফর আলীকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রুপার ভাই হাফিজুর বলেন, ‘সাজা পাওয়া সব আসামি খালাম চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। সে থেকে সাড়ে ৪ বছর যাবৎ মামলার আপিল শুনানি শুরুই হয়নি।
‘দীর্ঘ সময়ে মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় আমাদের পরিবারের বিচার পাওয়ায় অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। এখন বিচার নিয়ে আমরা রীতিমতো হতাশ।’
সে সময় রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) একেএম নাছিমুল আক্তার।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার ১৭৩ দিন আর মামলার ১৭১ দিনের মাথায় রায় হয়েছে। আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সব অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয় এবং উচ্চতর রায় পাই আমরা।
‘তবে এখনও রায়ের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় অনেকটাই হতাশ আমরা।’