ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাদের খান ও উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কাউন্সিলর মফিজুর রহমানের গ্রুপের দ্বন্দ্বে কড়াইল বস্তিতে আলামিন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
আলামিন হত্যা মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবির গুলশান বিভাগ এ তথ্য জানতে পেরেছে।
হত্যার ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার ও তদন্ত নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির প্রধান হারুন অর রশিদ।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন মোহাম্মদ আলী, মো. খাজা, মো. আমজাদ হোসেন, হুমায়ুন কবির রাসেল ও মাসুদ আলম। তাদের কাছ থেকে মারামারির কাজে ব্যবহৃত বড় ছোরা, চাপাতি, ডিস্ক কুড়াল, লোহার রডসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি জানায়, বনানীর কড়াইল বস্তিতে ৪০ হাজার অবৈধ ঘর রয়েছে। এসব ঘর থেকে ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির জন্য টাকা নেয়া হয়। সেসব টাকা সরকারি কোষাগারে না গিয়ে চলে যায় নিয়ন্ত্রণ করা গ্রুপের কাছে।
ডিবির ভাষ্য, কড়াইল বস্তিতে কমিটি গঠন এবং চাঁদাবাজিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে। আলামিন হত্যায় পাঁচজনকে ২২ ও ২৩ আগস্ট রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছে।
ডিবির প্রধান হারুন জানান, কড়াইল বস্তির বিভিন্ন ইউনিটে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন এবং বস্তির ঘর ভাড়াসহ অবৈধভাবে বিভিন্ন সেবার অর্থ আদায়ের মতো বিষয় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত ১৭ আগস্ট রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। বস্তির এরশাদ মাঠ এবং নূরানী মসজিদ এলাকায় নুরু-কবির-আলী গংয়ের সঙ্গে রিপন-জুয়েল-শুভ গংয়ের মারামারির ঘটনায় আলামিন নিহত হন।
ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ১০ ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
কড়াইল বস্তি এলাকায় রিকশাচালক, পরিছন্নতাকর্মী, পোশাক শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের বাস।
ডিবি জানিয়েছে, মূলত টিঅ্যান্ডটি, গণপূর্ত ও ওয়াসার মতো সরকারি সেবা সংস্থার জমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪০ হাজার ঘর। এসব ঘর অবৈধভাবে নির্মাণ, বরাদ্দ ও হস্তান্তরে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি হয়ে থাকে।
ডিবির তদন্তের তথ্য অনুযায়ী, ঘরগুলোতে অবৈধভাবে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি চলে আসছে দীর্ঘদিন। এ ছাড়া ডিশ সংযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ, ময়লা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও টাকা তোলা হয়। রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ইউনিট কমিটি স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় এ চাঁদার টাকা তোলে এবং ভাগ-বাটোয়ারা করে।
ডিবির প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, দুটি গ্রুপ এ চাঁদাবাজি করে থাকে। এই চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েই প্রায় প্রতি বছর খুনোখুনি হচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডে যাদেরই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এবারের দ্বন্দ্ব ‘নতুন কমিটি গঠন নিয়ে’
ডিবি জানায়, কড়াইল বস্তি মূলত ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। এর ৯০ শতাংশ পড়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। মফিজুর রহমান এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। কড়াইল বস্তির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাতটি ইউনিটে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে দুটি গ্রুপের বিবাদ চলে আসছে। গত ২২ জুলাই সাতটি ইউনিটের কমিটি হয়।
সেগুলো হলো কড়াইল উত্তর-১, কড়াইল উত্তর-২, কড়াইল বউবাজার পূর্ব, কড়াইল বউবাজার পশ্চিম, কড়াইল মশার বাজার, কড়াইল গোডাউন বস্তি এবং কড়াইল স্যাটেলাইট ইউনিট।
ডিবির প্রধান জানান, আওয়ামী লীগের ওই সাত কমিটির বেশির ভাগ পদে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাদের খানের গ্রুপের প্রাধান্য পাওয়ায় স্থানীয় কাউন্সিলর মফিজের গ্রুপের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এ ক্ষোভ থেকে দ্বন্দ্বেই প্রাণহানি হয় আলামিনের।