ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী তাদের ভাষায় ‘মূল্যবোধবিরোধী’ পোশাকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন।
নরসিংদীর রেলওয়ে স্টেশনে স্লিভলেস টপস পরার কারণে এক নারীকে হেনস্তার অভিযোগে আটক নারীর জামিন শুনানিতে হাইকোর্টে একজন বিচারক যে মন্তব্য করেছেন, তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পাদদেশে মানববন্ধন করেন তারা। এতে ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
তারা পোশাকের নামে পশ্চিমা ‘অপসংস্কৃতি’ আমদানিকারকদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিও করেন।
মানববন্ধন থেকে ‘দেশীয় মূল্যবোধবিরোধী’ পোশাকের বিরুদ্ধে ‘সোচ্চার’ হওয়ায় উচ্চ আদালতকে অভিবাদন ও স্যালুট জানানো হয় এই কর্মসূচিতে।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘দেশীয় মূল্যবোধবিরোধী সংস্কৃতি গ্রহণযোগ্য নয়’, ‘পোশাকের স্বাধীনতার নামে পাবলিক নুইসেন্স বন্ধ হোক’, ‘ছোট পোশাক নারীকে বিজ্ঞানী বানায় না, পণ্য বানায়’ ইত্যাদি লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
মানববন্ধনে অণুজীব বিজ্ঞানের রবিউল করিম বলেন, ‘পোশাকের স্বাধীনতার নামে বর্তমানে আমাদের সমাজে যা হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনকয়। এ পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালতের এত সুন্দর ও গঠনমূলক পর্যবেক্ষণ আমাদের সমাজের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে।’
অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মুহিউদ্দিন রাহাত বলেন, ‘বাকস্বাধীনতার অর্থ যেমন অন্যকে গালি দেয়া নয়, ঠিক তেমনি পোশাকের স্বাধীনতার অর্থ অন্যকে বিরক্ত করা নয়। পোশাকের স্বাধীনতার নামে এমন পোশাক পরা কখনই ঠিক না, যা পাবলিক নুইসেন্স বা গণ-উৎপাত বা বিরক্তি তৈরি করে। পাবলিক নুইসেন্স এক ধরনের ক্রাইম।’
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রাইভেট আর পাবলিক প্লেসের ড্রেস কখনও এক না। অনেকে পোশাকের স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানি করে পাবলিক প্লেসে মানুষকে কষ্ট দেয়, এটা অবশ্যই অন্যায়। সে তার বাড়িতে সেই স্বাধীনতা পালন করুক, পাবলিক প্লেসে সবার মূল্যবোধ মেনেই তাকে চলতে হবে।’
আরবি বিভাগের ফজলুল আলম বলেন, ‘পাবলিক প্লেসে পোশাক স্বাধীনতার আড়ালে অনেকের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গকে সিডিউস (যৌন সুড়সুড়ি) করার চেষ্টা দেখা যায়। পাবলিক প্লেসে কাউকে সেক্সুয়ালি সিডিউস করা মানসিক নির্যাতনের শামিল। একজনকে মানসিক নির্যাতনের অধিকার অবশ্যই অন্যজনকে দেয়া হয়নি।’
দর্শন বিভাগের রেহানা রাহী বলেন, ‘সংস্কৃতি অবশ্যই পরিবর্তনশীল। কিন্তু আমরা যে সংস্কৃতি গ্রহণ করব, সেটা অবশ্যই আমাদের দেশীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আজকাল পোশাকের স্বাধীনতার নামে যে পশ্চিমা অপসংস্কৃতি আমদানি করা হচ্ছে, তা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে। এটা এক ধরনের কালচারাল টেররিজম।’
যে ঘটনায় এই মানববন্ধন
স্লিভলেস টপ পরা এক তরুণীকে নরসিংদী রেলস্টেশনে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার মার্জিয়া আক্তার শিলাকে জামিন দেয়ার সময় হাইকোর্টে এক বিচারকের মন্তব্য নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৬ আগস্ট মার্জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেয়।
মার্জিয়ার আইনজীবী মো. কামাল হোসেনের বরাতে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শুনানির সময় আদালত দেশের কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে তরুণীর পোশাক সংগতিপূর্ণ কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছে। ওই তরুণী যে পোশাক পরেছিলেন, সেটি দেশের সবচেয়ে ‘ফাস্ট এরিয়া’ গুলশান-বনানীতেও কোনো মেয়ে পরে রাস্তায় বের হন না।
গণমাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর তুমুল সমালোচনা হয়। আর ১৭ আগস্ট মার্জিয়ার আইনজীবী কামাল হোসেন ফেসবুকে সমালোচনার বিষয়টি হাইকোর্টের একই বেঞ্চের নজরে এনে সমালোচনাকারীদের শাস্তি দাবি করেন।
আদালত ফেসবুকে মন্তব্যকারীদের বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে স্ক্রিনশট জমা দিতে বলেছে।
পাশাপাশি হাইকোর্ট বেঞ্চটির জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘আমরা তো আদেশে পোশাক নিয়ে কিছুই লিখেনি, আমরা ভিডিও দেখে আইনজীবীদের কাছে শুধু জানতে চেয়েছি।
‘ভিডিও দেখে রাষ্ট্রের কাছে জানতে চেয়েছি, এমন ড্রেস পরে এমন গ্রাম এলাকায় যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ কি না।’
কামাল হোসেন জানান, জামিন শুনানির সময় তরুণী যে পোশাক পরেছিলেন, সেটি কোনো সভ্য দেশের পোশাক হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন আদালত তুলেছে। তবে তার মতে, বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করার সুযোগ নেই।
আর এই বেঞ্চ জামিন দিলেও সেই আদেশ চেম্বার আদালত স্থগিত করে দেয়ায় মার্জিয়া মুক্তি পাননি।