বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বাবুলের পরিকল্পনায়’ তিন লাখ টাকায় মিতুকে হত্যা

  •    
  • ২৫ আগস্ট, ২০২২ ১০:৫২

পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘অন্য নারীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্কের বিষয়টি মিতু জানার পর সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এর জেরেই তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করে নিজের পরিকল্পনামতো স্ত্রীকে খুন করেন তিনি। পুরো বিষয়টি সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে।’

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করতে খুনিদের তিন লাখ টাকা দেন সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। তার পরিকল্পনা ও অর্থায়নেই মিতুকে খুন করা হয়। অন্য নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্কের জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

বাবুল আক্তারের মামলার তদন্তে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

উন্নয়নকর্মীর সঙ্গে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে সাংসারিক তিক্ততা থেকে বাবুল আক্তার এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক।

এ হত্যাকাণ্ডে পিবিআইয়ের তদন্ত এখন শেষ পর্যায়ে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র তৈরিও সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে তদন্তে সম্মতি জানিয়ে মামলার সাক্ষ্য স্মারকে (এমওই) সই করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী।

নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করে পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘অন্য নারীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পর্কের বিষয়টি মিতু জানার পর সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেই ৩ লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করে নিজের পরিকল্পনামতো স্ত্রীকে খুন করেন তিনি। পুরো বিষয়টি সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে।’

২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু।

এ ঘটনায় জঙ্গিরা জড়িত দাবি করে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে পিবিআই গত বছরের ১২ মে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

হত্যায় ‘বাবুল জড়িত’ বলে সন্দেহ হলে একই দিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন আরেকটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় বাবুলসহ আটজনকে আসামি করা হয়। পুলিশ এ মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখায়।

বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ অক্টোবর আদালতে নারাজি দেন আইনজীবী। আদালত ৩ নভেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। পরে আদালত বাবুলকে নিজের করা মামলায়ই গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেয়।

এর মধ্যে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পিবিআই মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের করা মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এতে ওই মামলায় গ্রেপ্তার আসামি বাবুলসহ অন্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়। ওই মামলায় পাওয়া সব তথ্য-উপাত্ত বাবুল আক্তারের করা মামলায় একীভূত করতেও আবেদন জানানো হয়।

পিবিআইয়ের অধিকতর তদন্তে বাবুল আক্তারের করা মামলায় তাকেই আসামি করা হচ্ছে। তদন্তে বলা হয়, ২০১৩-১৪ সালে বাবুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত ছিলেন। সে সময় সেখানে কর্মরত এক বিদেশি উন্নয়নকর্মীর সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে।

গায়ত্রী অমর সিং নামের ওই নারীর বাসার নিরাপত্তাকর্মী সরওয়ার আলম ও গৃহকর্মী পম্পি বড়ুয়ার আদালতে দেয়া জবানিতে ওই বাসায় বাবুলের যাতায়াতের বিষয়টি উঠে আসে। এ ছাড়া বাবুল আক্তারকে উপহার দেয়া গায়ত্রীর একটি বই জব্দ করে পিবিআই। সেই বইয়ে প্রথম দেখা ও তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে বাবুলের হাতে লেখা কিছু তথ্য রয়েছে।

পিবিআইয়ের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, খুনের পুরো ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ৬ জন। অস্ত্র সরবরাহ করেন আরেকজন। কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দেন বাবুলের ‘সোর্স’ মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা।

২০১৬ সালে মিতু খুনের পর গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে দেয়া ওয়াসিম ও আনোয়ারের জবানবন্দিতে কামরুলের নির্দেশে খুনের কথা উঠে আসে। এরপর ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর আসামি এহতেশামুল হক ভোলার জবানবন্দিতেও বাবুলের নির্দেশে তার সোর্স মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা মিতুকে খুন করে বলে জানান।

জবানবন্দিতে ভোলা বলেছিলেন, নির্দেশ না মানলে তাকে ‘ক্রসফায়ারে’ দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বাবুল। তবে ঘটনার কয়েক দিন পর কামরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে পুলিশে ধরে নেয়ার কথা বললেও পুলিশ বলছে সে নিখোঁজ।

পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। অভিযোগপত্রে বাবুলসহ সাতজনকে আসামি ও ৯৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এ ছাড়া চারজনকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। ঢাকা থেকে অনুমতি পেলে আগামী সপ্তাহে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হবে।’

বাবুল ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া। এর মধ্যে মুসা ও খাইরুল ছাড়া বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।

যে চারজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন সাইদুল ইসলাম শিকদার ওরফে সাক্কু, আবু নাছের, নুরুন্নবী ও মো. রাশেদ। এর মধ্যে রাশেদ ও নুরুন্নবী হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন পর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

এ বিভাগের আরো খবর