‘পালিয়ে না থেকে জনগণের টাকা ফেরত দিন। জনগণের টাকা ফেরত দিয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করুন। টাকা ফেরত দিলে জেল খাটতে হবে না।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের ঋণখেলাপিদের উদ্দেশ করে বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
এ সময় পিপলস লিজিং থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হওয়া দুই বোন শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার ভোরে রাজধানী থেকে এই দুই বোনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাদেরকে হাইকোর্টের এই বেঞ্চে হাজির করা হয়।
আদালতে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদের মুক্তি চেয়ে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু তালেব আবেদন জানান।
আইনজীবী বলেন, ‘শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ দুজনই নারী। তাদের উভয়ের শিশু সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিবন্ধী শিশুও রয়েছে। আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যেন তাদের জামিন দেয়।’
বিচারক বলেন, ‘আমরা কাউকে জেলে আটকে রাখতে চাই না। শাস্তি দিতে চাই না। কিন্তু আপনারা জনগণের টাকা নিয়ে কানাডায় পালিয়ে থাকেন। আপনাদেরকে কেন খুঁজে বের করতে হবে? জনগণের টাকা ফেরত দিন। আমরা আপনাদের আটকে রাখব না।’
‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে স্যালুট জানাই, এত কাজের মাঝেও তারা এদেরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করেছে।’
পরে আদালত অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তির নির্দেশ দেয়।
শর্তের মধ্যে রয়েছে- এক মাসের মধ্যে ১০ কোটি টাকা জমা দেয়া। দুই বোনসহ তাদের পরিবারের মোট ১১ জনের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেয়া।
আদালতে পিপলস লিজিং পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।
আদেশের পর অ্যাডভোকেট আবু তালেব বলেন, ‘দুই বোন ইতোমধ্যে তাদের পাসপোর্ট আদালতের কাছে জমা দিয়েছেন। তাদের পরিবারের বাকি ৯ জনের পাসপোর্ট র্যাবের কাছে জমা দিতে হবে। র্যাব আদালতের কাছে এ পাসপোর্ট জমা দবেন। পরিবারের ১১ জনের পাসপোর্ট জমা দেয়ার আগ পর্যন্ত তারা র্যাবের হেফাজতে থাকবেন। এছাড়া দেশের বাইরে যেতে তাদের আদালতের অনুমতি নিতে হবে।’
ঋণখেলাপি দুই বোনসহ তাদের পরিবারের মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ১৯ এপ্রিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে হাইকোর্ট। তাদের আদালতে হাজির করতে র্যাবসহ -আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়। সেই নির্দেশের আলোকেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৯ সালে কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।
এ সময় আদালত পি কে হালদারসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। সম্প্রতি পি কে হালদার ভারতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হয়। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন করতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে উচ্চ আদালত।