খুলনার দাকোপের বানীশান্তার তিন ফসলি জমিতে বালু ফেলে শস্য উৎপাদন বন্ধ করার অভিযোগ এনে এমন সিদ্ধান্তের জন্য মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যানের অপসারণ ও শাস্তি দাবি করেছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী ৯টি সংগঠন আয়োজিত নাগরিক সভায় তিনি এ দাবি করেন।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘উন্নয়ন হলো উপায়। উন্নয়ন কোনো জাতির লক্ষ্য হতে পারে না। লক্ষ্য হবে জনস্বার্থ, মানবাধিকার ও জনকল্যাণ। জনগণের জন্যই উন্নয়ন। আজ কর্তাব্যক্তিরা উন্নয়নকেই লক্ষ্য হিসেবে ধরে নিয়েছেন। জনস্বার্থকে আমরা উন্নয়নের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছি।
‘জনস্বার্থ বিবেচনা না করে নীতিনির্ধারকেরা সিদ্ধান্ত নেয়ায় এই উন্নয়ন আমাদের বিপদে ফেলছে, বিরক্ত করছে।’
তিনি বলেন, বানিশান্তার আন্দোলনকে বাপা নিজেদের আন্দোলন মনে করে এবং আমরা তাদের পাশে আছি। এ ধরনের জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত ও অসদাচরণের জন্য মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসার অপসারণ ও গ্রেপ্তার দাবি করছি।’
নিজেরা করি সংগঠনের সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, ‘দেখানোর জন্য উন্নয়ন করা হলে সেটি উন্নয়ন নয়। জনগণের ক্ষতি করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে সেটি জনস্বার্থবিরোধী এবং এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
‘প্রধানমন্ত্রী কৃষির উন্নয়নের কথা বলেন। কিন্তু এসব নীতিনির্ধারক হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবজ্ঞা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা এগুলো করার স্পর্ধা দেখান।’
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র বলতে সবাই কেবল সঠিকভাবে ভোট দেয়াকে মনে করে। যাদের নির্বাচিত করা হয় তারা জবাবদিহি করবে কি না সেটা দেখা হয় না। জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহি না থাকায় তারা গণবিরোধী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। আইন, সমাজ, নীতি, সংবিধান ওনাদের কাছে জিম্মি কি না তাও আমাদের দেখতে হবে। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
‘মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে জবাবদিহিতা লঙ্ঘনকারীদের ছাড় দেয়া যায় না। আর ছাড় দেয়া না হলেই অন্যরা বুঝবে- আমি একটা পোস্ট পেয়েছি, আমি রাজা নই।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি-বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘খুলনা কৃষিপ্রধান জেলা। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদী ড্রেজিং সংক্রান্ত মোংলা বন্দর ইনারবার ড্রেজিং শীর্ষক প্রকল্প নিয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে পশুর নদীর ড্রেজিংকৃত বালু ফেলার জন্য এক হাজার একর জমি হুকুম দখলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে খুলনার দাকোপ উপজেলার বানীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর তিন ফসলি উর্বর জমি রয়েছে।
‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এখানে বালু ফেললে প্রস্তাবিত জমিতে ফসল চাষ ব্যাহত হবে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রান্তিক মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম সংস্থান পুকুর, জলাশয়, মৎস্যসম্পদ ও গবাদি পশু-পাখি। স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবে অন্তত ১ হাজার ৫০০ পরিবার। মাটি ভরাটের এমন উদ্যোগে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে।’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এলাকাবাসী নদী ড্রেজিংয়ের বিপক্ষে নয়। কিন্তু তা কৃষকের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ দুই বছরের জন্য কৃষিজমি হুকুম দখলের প্রস্তাব করলেও বাস্তবে বালু ভরাটের পর এ জমি আর কৃষি আবাদের উপযোগী থাকবে না।
২০১১ ও ২০২১ সালে চিলাতে ফেলা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ড্রেজিংয়ের মাটিতে ফসল তো দূরে থাক, আগাছাও জন্মেনি। বানীশান্তাতেও বালু ফেললে এলাকার জনগোষ্ঠী জীবন-জীবিকা হারিয়ে স্থানান্তরে বাধ্য হবে, যা অসাংবিধানিক ও অসংবেদনশীল।
নাগরিক সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, শামসুল হুদা, মনীন্দ্র কুমার নাথ, সাংবাদিক সোহরাব হোসেন প্রমুখ।