দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় শ’ আসনে কেন ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চান সে বিষয়ে নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। মূলত ব্যালট ও ইভিএমে তুলনামূলক পার্থক্য করতেই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির এমন সিদ্ধান্ত।
রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে বুধবার সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন সিইসি। আগের দিন ইসি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়।
সিইসি বলেন, ‘১৫০টিতে ইভিএম ও বাকি ১৫০টি আসনে ব্যালট ব্যবহার করলে দুটির মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি হবে। তখন আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে ইভিএম ব্যবহারে ভালো না মন্দ হচ্ছে।’
একইসঙ্গে তিনি এটাও বলেন যে সামর্থ্য না থাকায় কমিশন তিন শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করতে পারছে না।
১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট আরো প্রকট করে তুলবে কিনা- এমন প্রশ্নে সিইসি সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাই না।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা ইভিএম নিয়ে চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমরা প্রথম থেকেই বলেছিলাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং টেকনিক্যালিও ইভিএম নিয়ে যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা হয়েছে তা কতটা নির্ভরযোগ্য বা সত্য, তা-ও আমরা পরখ করে দেখার চেষ্টা করেছি।
‘আমরা বিভিন্ন দলকে বলেছিলাম আপনাদের টেকনিক্যাল পারসনদের নিয়ে আসুন। তারাও এসেছিলেন। ইভিএমে একটা কথা চাউর হয়েছে যে এখানে ভোট দিলে ওখানে চলে যাবে- আমরা আজ পর্যন্ত এর কোনো নির্ভরযোগ্যতা পাইনি। তারাও দেখাতে পারেননি।’
তিনি বলেন, আমরা অনেক কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করেছি ও দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে ১৫০:১৫০ ভাগ করে ইভিএম ব্যবহার করব। আমরা পুরোপুরি আস্থাশীল হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যালট পেপারে যে সমস্যা হয় তার জবাব ইভিএমে ভালভাবে পাওয়া যাবে। কেননা এতে সহিংসতা, কারচুপি সম্ভব হয় না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘কোনো দলের চাওয়ার পক্ষে, বিরোধীদের বিপক্ষেও নয়। একাধিক দল বিপক্ষে বলেছে। আমরা সবার মতামত নিয়েছি। সম্ভব হলে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করব। এখন সম্ভব হবে কি-না জানি না।’
বিএনপি যদি পরবর্তীতে কোনো দাবি নিয়ে আসে তখন কী করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ওনারা এলে হয়তো আলোচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’
সব দলের মতামত কমিশন বিবেচনায় নিয়েছে জানিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ভোটকে হ্যান্ডেল করার দায়িত্ব ইসির। কিভাবে ভোট করলে স্বচ্ছ হতে পারে, সুষ্ঠু হতে পারে এবং ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে, সেটা আমাদের মুখ্য বিবেচনার বিষয়। দলগুলোর কে কী বলেছে তা মুখ্য বিবেচনায় আসেনি।
‘তবে তাদের বক্তব্যগুলো আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। একইসঙ্গে ভোটাররা যাতে আরো ভালোভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা-পর্যালোচনা করে আমরা সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। এখন ইভিএমের ক্ষেত্রে ওই ধরনের মাস্তানি কেউ করলে তা মোকাবেলা করতে হবে। আমরা তা করব।’
চলমান রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আরেক বিতর্ক জন্ম দিল কীনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ভবিষ্যতে কী হবে তা দেখার জন্য আপনারা ওয়েট করেন, আমরাও ওয়েট করি। দেখি কী হয়। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা জানিয়েছি। ভবিষ্যৎ আমরা বলতে পারি না। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও সংকট ছিল, ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়েও সংকট ছিল। এবার আদৌ নির্বাচন নিয়ে সংকট হবে কি না তা তো বলা যাবে না।’
আপনি অংগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক হবে- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব না।’