অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গ্রেপ্তার পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদকে প্রায় ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের ৫ শতাংশ (প্রায় ১০ কোটি টাকা) পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে তাদের দুজনকে পুলিশ হেফাজতে রাখতে বলেছে আদালত। পাশাপাশি ওই দুজনের পরিবারের ঋণখেলাপি বাকি ৯ সদস্য পাসপোর্ট জমা না করা পর্যন্ত দুই বোনের পাসপোর্ট জমা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
এর আগে এদিন ভোরে দুই বোনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাদের হাইকোর্টের এই বেঞ্চে হাজির করা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ভারতে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সহযোগী খবির উদ্দিনের দুই মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ নামে এ দুই বোন ৬৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সংবাদ সম্মেলনে জানান, শারমিন ও তানিয়া দুই দশক ধরে কানাডায় থাকেন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৮ জুলাই তারা দেশে আসেন। বুধবার দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল তাদের। এর আগেই ভোরে দুজনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাবের ভাষ্য, পিপলস্ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন পি কে হালদারের অন্যতম সহযোগী। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরিচালক ছিলেন। ওই সময়ে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে-বেনামে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।
পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
চলতি বছরের ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ঋণখেলাপিদের আদালতে হাজির করার নির্দেশনা দেয় হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল আদালত তাদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়।
খন্দকার আল মঈন জানান, র্যাব জানতে পারে যে প্রতিষ্ঠানের দুজন ঋণখেলাপি বর্তমানে বাংলাদেশে রয়েছেন। র্যাব তাদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, গ্রেপ্তার দুজন তাদের বাবা খবির উদ্দিনের মাধ্যমে ঋণ নেন। শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস্ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তী সময়ে নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে ২০১৯ সালে কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় আদালত পি কে হালদারসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
র্যাব জানায়, প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি/শ্রেণির আমানতকারী রয়েছেন এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এ অর্থের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা বিভিন্ন নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।